সোমবার ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাজশাহী যুবলীগের নেতৃত্ব চান প্রধান-মন্ত্রীকে হুমকিদাতার ছেলে

আপডেটঃ ৪:৩৬ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৩

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- রাজশাহী যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে সাধারণ সম্পাদকের পদে চেয়েছেন,বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খূনী কর্নেল ফারুকের ফ্রীডম পাটির প্রার্থী হিসাবে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে দুইবার নির্বাচন করা অ্যাডভোকেট হাবিবের ছেলেসৈকত এবার জেলা যুবলীগের সম্পাদক হতে চাইছেন।এই সৈকতের পিতা হাবিবের বিরুদ্ধে ফ্রিডম পার্টির নেতা কর্নেল ফারুকের উপস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে কুড়াল দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।এনিয়ে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ ও এর অংগসমূহের নেতা কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখাদিয়েছে।আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আমরা ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছি। সৈকত এবার জেলা যুবলীগের সম্পাদক হতে চাইছেন।মনে হচ্ছে খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মারা আবারও ফিরে আসছে।এরা যেন সংগঠনে আসতে না পারে এজন্য হাইকমান্ডের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

রাজশাহী জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ইয়াসির আরাফাত সৈকত।২০১৬ সালে তিনি এই পদ পান।আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা যুবলীগের সম্মেলন।এবার তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।এই ইয়াসির আরাফাত সৈকত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুকের ফ্রিডম পার্টির রাজশাহী জেলা শাখার সাবেক সভাপতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিবের ছেলে।

তার বাড়ি গোদাগাড়ীর রিসিকুল ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে।অ্যাডভোকেট হাবিব ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী হিসাবে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে দুইবার নির্বাচন করেছেন।এমনকি হাবিবের বিরুদ্ধে ফ্রিডম পার্টির নেতা কর্নেল ফারুকের উপস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে কুড়াল দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

ফ্রিডম পার্টির ওই নেতার ছেলে সৈকত এবার রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন।এ নিয়ে রাজশাহী আওয়ামী লীগ ও যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।দাবি উঠেছে দ্রুত তাকে দল থেকে বহিস্কারের।যুবলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৫ আগস্টের কালো অধ্যায়ের ক্রীড়নক কর্নেল ফারুক।

সেই খুনি ফারুকের দোসর অ্যাডভোকেট হাবিবের ছেলে সৈকত জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হয়ে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলফোর রহমান ফেসবুক পোস্টে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আলফোর রহমান গত ৪ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুকের দোসর হাবিবুরের ছেলে সৈকত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিল।এখন রাজশাহী জেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

ফ্রিডম পার্টি করা বাবার ছেলে কী করে আওয়ামী লীগের আদর্শের কর্মী হতে পারে ? সৈকত অনুপ্রবেশকারী।তাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।জেলা আওয়ামী যুবলীগকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।

গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ নেতা বদরুজ্জামান রবু মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়েছে ফ্রিডম পার্টি।আর ফ্রিডম পার্টির নেতার ছেলে যদি যুবলীগের নেতৃত্বের পদপ্রত্যাশী হয়, তাহলে এটি মেনে নেওয়া কঠিন।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে গোাদাগাড়ীতে ফ্রিডম পার্টির সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কর্নেল ফারুক।এ সময় তার উপস্থিতিতে হাবিবুর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কুড়াল দিয়ে হত্যার হুমকি দেন।জানা গেছে, ২০১১ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেন সৈকত।

এর দুই বছর পর ২০১৩ সালে সৈকতকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত হন।এর পর ২০১৬ সালের মার্চে রাজশাহী জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে আবু সালেহকে সভাপতি এবং প্রয়াত খালেদ ওয়াসি কেটুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।পরে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির নামের তালিকা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠান।

ওই তালিকায় সৈকতের নাম ছিল না।সে সময়ের কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল।ওই নেতার সুবাদে সৈকত জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের পদটি হাতিয়ে নেন।ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ বলেন, এটি নিয়ে আমাদের করার কিছু ছিল না।আমরা ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছি।

সৈকত এবার জেলা যুবলীগের সম্পাদক হতে চাইছেন।মনে হচ্ছে খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মারা আবারও ফিরে আসছে।এরা যেন সংগঠনে আসতে না পারে এজন্য হাইকমান্ডের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।এদিকে অভিযোগ উঠেছে, শুধু সৈকত নয়, তার নিকটাত্মীয়রাও যুবলীগে পুনর্বাসিত হয়েছেন।সৈকতের মামা শফিকুল সরকার এক সময় বিএনপির দাপুটে নেতা ছিলেন।

তিনি ছিলেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ঘনিষ্ঠ সহচর।২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।বাগিয়ে নেন গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতির পদ।এছাড়া সৈকতের খালাতো ভাই কল্লোলকে সম্প্রতি গোদাগাড়ী পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি করা হয়েছে।

তিনিও এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন।অভিযোগের বিষয়ে ইয়াসির আরাফাত সৈকত বলেন, নির্বাচন করলেও আমার বাবা ফ্রিডম পার্টির জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন না।আমি অল্প বয়স থেকেই ছাত্রলীগ করছি।আমার বাবা আমাকে ছাত্রলীগ করতে নিষেধ করেননি।তিনি যদি ফ্রিডম পার্টি করেন, সেটির দায় আমার নয়।

নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে নেতৃত্বে আসার অভিযোগ অস্বীকার করে সৈকত বলেন, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।আর আমার বাবার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ আনা হচ্ছে-এটি একটি মহলের ষড়যন্ত্র।আমার খালাতো ভাই কল্লোল ছাত্রদল করত কিনা আমার জানা নেই।তবে মামা শফিকুল এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।