বৃহস্পতিবার ৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

নেত্রকোনায় বিরল রোগে মা-ছেলের জীবন সংগ্রাম: চিকিৎসার অভাবে নিভে যাচ্ছে আশা

আপডেটঃ ১২:৪০ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ০৬, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

নেত্রকোনা:- নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার অতিথপুর গ্রামের এক কোণে, জরাজীর্ণ একটি কুঁড়েঘরে বাস করেন কাজল মিয়া (২২) ও তার মা শাহানা খাতুন (৪৫)।মা-ছেলে দুজনই আক্রান্ত এক বিরল ও ভয়াবহ টিউমারে—যা ধীরে ধীরে কেড়ে নিচ্ছে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষমতা, এমনকি বেঁচে থাকার আশা পর্যন্ত।সুন্দরের প্রতিচ্ছবি যে মুখ, সেই মুখই এখন কাজলের বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে।জন্মের সময় কাজলের মুখে ছিল ছোট একটি টিউমার।বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেটি বেড়ে এখন তার এক চোখ ও মুখ পুরোপুরি ঢেকে ফেলেছে।মুখের নিচে ঝুলে পড়েছে বিশাল মাংসপিণ্ড।

খাওয়া-দাওয়া করতে কষ্ট হয়, এক চোখে দেখতে পান না।বিকৃত চেহারার কারণে এখন গ্রামের তরুণেরা তার সঙ্গে মিশতে চায় না—একাকীত্ব যেন তার নিত্যসঙ্গী।শুধু কাজল নন, তার মা শাহানা খাতুনও একই রোগে ভুগছেন।গালের পাশ থেকে ঝুলে পড়েছে টিউমার, যা বুক পর্যন্ত বিস্তৃত।শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গুটি।

দুজনকেই নিয়ে দিশেহারা দিনমজুর বাবা মিরাজ আলী।সামান্য দৈনিক মজুরির টাকায় সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এই ভয়াবহ রোগের চিকিৎসা করানো তার পক্ষে কল্পনাতীত।দারিদ্র্য আর সমাজের অবহেলায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এই পরিবার।পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিরাজ আলীর স্ত্রী শাহানার মুখে বিয়ের আগে থেকেই ছোট টিউমার ছিলো।

শরীরে ছিলো ছোট গুটি গুটি টিউমার।বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই টিউমার বড় হয়ে ঝুলে পড়েছে।শরীর জুড়ে দেখা দিয়েছে অসংখ্য টিউমার।দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে মেঝো ছেলে কাজলের মুখে শুধু এমন টিউমার দেখা দিয়েছে।বাকিদের শরীরে কোন টিউমার নেই।বিরল রোগে আক্রান্ত কাজল মিয়া বলেন, ছোট বেলায় কপালের কাছে ছোট একটা টিউমার হয়েছিল।

সেটা বড় হতে হতে এমন অবস্থায় দাড়িয়েছে।এক চোখ টিউমারে ঢেকে যাওয়ার সেই চোখে আর দেখতে পাই না।মুখ ঢেকে যাওয়ায় কথা বলতে ও খাবার খেতে কষ্ট হয়।এই অবস্থায় কোন কাজ কর্ম করতে পারি না।মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই তা দিয়ে চলি।টিউমার ভালো হলে কাজ করেই খেতে পারতাম।আমার খুব ইচ্ছা হয় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে।

এমন জটিল রোগ হওয়ায় এলাকার কোন মানুষ আমার সাথে মিশে না।একাই চলতে হয়।কাজলের মা শাহানা খাতুন বলেন, আমার দিন তো শেষের দিকে।ছেলেটার তো সামনে সারাজীবন পড়ে রয়েছে।এমন রোগ নিয়ে বাকিটা জীবন কেমনে কাটাবে।এভাবে টিউমার বাড়তে থাকলে জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই।

সরকারি সহায়তায় চিকিৎসা পেলে সে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতো হয়তো।মিরাজ আলী বলেন, ছেলে আর স্ত্রী দুইজনেই অসুস্থ।আমি গরীব মানুষ, কেমন করে ওদের চিকিৎসা করব বুঝি না।মানুষের কাছে চাই চিন্তা করে যা পাই তাই দেই খেতে।তাদের নিয়ে কি করব একমাত্র আল্লাই জানেন।প্রতিবেশীরা জানালেন, সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা তারা এখনও পাননি।

প্রতিবেশী আহমেদ শরীফ বলেন, ওদের অবস্থা খুব খারাপ।সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো চিকিৎসা সম্ভব হতো।আমাদের সবার উচিত ওদের পাশে দাঁড়ানো।

IPCS News : Dhaka :  শহীদুল ইসলাম : নেত্রকোনা।