সোমবার ১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

ট্রাম্প-বিবিসি দ্বন্দ্বের রেশ: মহাপরিচালক ও নিউজ প্রধানের পদত্যাগে নতুন অধ্যায়

আপডেটঃ ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ১০, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিতে বড় ধরনের প্রশাসনিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি তথ্যচিত্রে ভুলভাবে সম্পাদনার অভিযোগ ঘিরে তীব্র সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং সংবাদ বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেবোরাহ টারনেস। একদিনে দুই শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগ বিবিসির দীর্ঘ ইতিহাসে বিরল ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিবিসির প্যানোরামা নামের একটি তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ভাষণের অংশবিশেষ এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছিল, যাতে মনে হয় তিনি সরাসরি ক্যাপিটল হিলে হামলার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ ফাঁস হওয়া একটি অভ্যন্তরীণ নথির মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করলে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। প্রকাশিত নথিতে দেখা যায়, ট্রাম্পের বক্তৃতার দুটি আলাদা অংশ একত্রে জোড়া দেওয়া হয়েছিল—যেগুলোর মধ্যে মূল ভাষণে প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধান ছিল।ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই বিবিসির নিরপেক্ষতা ও সম্পাদকীয় নীতির প্রশ্নে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক পর্যন্ত অনেকেই অভিযোগ তোলেন, বিবিসি দীর্ঘদিন ধরে পক্ষপাতমূলক সাংবাদিকতার আশ্রয় নিচ্ছে। বিতর্কের মুখে রোববার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন টিম ডেভি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের কাজ নিখুঁত হতে পারে না, কিন্তু তা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর চূড়ান্ত দায়ভার নিজের বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, মহাপরিচালক হিসেবে বিবিসির ত্রুটির দায় আমি এড়াতে পারি না।

একইদিন ডেবোরাহ টারনেসও পদত্যাগপত্র জমা দেন। বিবৃতিতে তিনি জানান, প্যানোরামা নিয়ে চলমান বিতর্ক এখন বিবিসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। যদিও তিনি ‘প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাতের’ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, বিবিসি সবসময়ই সত্য ও ভারসাম্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, বিবিসির আরবি বিভাগ ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের খবর প্রচারে পদ্ধতিগত পক্ষপাত দেখিয়েছে। এছাড়া নথিতে উল্লেখ আছে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু এবং গাজার ওপর নির্মিত এক ডকুমেন্টারিতে তথ্য গোপনের ঘটনাও।

হোয়াইট হাউস বিবিসির কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘সম্পূর্ণ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ বলে মন্তব্য করেছে। ট্রাম্প নিজেও এক বিবৃতিতে পদত্যাগকে ‘ন্যায়সঙ্গত ফলাফল’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “ওরা আমার নিখুঁত ভাষণ বিকৃত করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। এই ধরনের অসৎ মানুষ গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”বিবিসি বোর্ডের চেয়ারম্যান সামির শাহ পদত্যাগকে প্রতিষ্ঠানের জন্য “দুঃখজনক দিন” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, টিম ডেভি দীর্ঘদিন পেশাদারিত্বের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তবে ক্রমবর্ধমান ব্যক্তিগত ও পেশাগত চাপের কারণেই তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ব্রিটিশ সংস্কৃতি সচিব লিসা ন্যান্ডি বলেন, “বিবিসি আমাদের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টিম ডেভি কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার অবদান আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করব।” অন্যদিকে কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনোক মন্তব্য করেন, “দীর্ঘদিনের পক্ষপাত ও ব্যর্থতার সংস্কার না হলে জনগণের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি আদায়ের কোনো নৈতিক ভিত্তি থাকে না।”লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা স্যার এড ডেভি পদত্যাগকে বিবিসির জন্য “নতুন সূচনার সুযোগ” হিসেবে দেখছেন। আর রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফারাজ বলেছেন, “এখনই সময় বিবিসিকে ভেতর থেকে বদলে ফেলার।”

বিবিসির সাবেক কর্মকর্তারাও এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সাবেক নিউজ প্রধান রজার মোসি বলেন, “ট্রাম্পের ভাষণ বিকৃত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এবং বিবিসি ঘটনাটির জবাবে দেরি করেছে।” একইভাবে চ্যানেল ৪–এর সাবেক নিউজ প্রধান ডরোথি বাইর্ন মন্তব্য করেন, “এটি ছিল একটি মৌলিক ভুল, এবং ক্ষমা চাইতে বিলম্ব করে বিবিসি নিজের ক্ষতি করেছে।”টিম ডেভি জানিয়েছেন, তার পদত্যাগ কার্যকর হবে এমন সময়ে, যখন নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে পরবর্তী রয়্যাল চার্টার প্রণয়নের আগে বিবিসি নতুন করে নিজেদের অবস্থান পুনর্গঠন করতে পারবে।

এখন সবার নজর বিবিসি বোর্ডের দিকে—কে এই সংকটময় মুহূর্তে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে আসবেন, সেটিই যুক্তরাজ্যের সংবাদ অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন।

IPCS News : Dhaka :