বৃহস্পতিবার ১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

অনিয়ম-দুর্নীতির বেড়াজালে নিমজ্জিত রেলওয়ে

আপডেটঃ ২:২৮ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ০৬, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

রেলওয়ের সংকটের মূল শিকড় নিহিত অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিতে।কর্মকর্তাদের পদোন্নতি-বদলি নিয়ে দ্বন্দ্ব, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের প্রভাব, অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ—সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত।বাংলাদেশ রেলওয়ে  দীর্ঘদিন ধরে নানাবিধ সংকটময় অবস্থায়।কখনো ইঞ্জিন বিকল, কখনো লাইনচ্যুত হওয়া, কখনো বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে চলন্ত ট্রেনকে বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া—এসব যেন এখন দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।সমস্যা গুলোর সমাধানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঘন ঘন সভা-সেমিনার কিংবা কর্মকর্তাদের কাগুজে পরিকল্পনা—এসবের মধ্যে দিয়ে বাস্তব সংকট নিরসন হচ্ছেনা।বরং রেলওয়ের যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা ও অনিয়ম-দুর্নীতির বেড়াজালে প্রতিষ্ঠানটি আরও গভীর থেকে গভীর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।

রেলের প্রকৃত সমস্যাগুলো গুলো চিণ্হিত জরুরী।রেলওয়ের প্রকৃত প্রয়োজন কি ? দূর্নীতি রোধ,নতুন লোকোমোটিভ কারখানা, নাকি নতুন ইঞ্জিন, নতুন কোচ এবং ট্রেন পরিচালনার জন্য কার্যকর রেললাইন সংস্কার?বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমানে মোট লোকোমোটিভ সংখ্যা মাত্র ৩০৬টি।এগুলোর একটি বড় অংশ পুরনো এবং প্রায়শই অচল হয়ে পড়ে।

প্রতিদিন চলাচলরত অসংখ্য ট্রেন সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না কেবল ইঞ্জিন বিকল বা যান্ত্রিক সমস্যার কারণে।যাত্রী হয়রানি, অর্থনৈতিক ক্ষতি, এবং রেলওয়ের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা এভাবেই বাড়ছে।এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে পার্বতীপুরে দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা (CLW-2) নির্মাণের উদ্যোগ।

বিদ্যমান লোকোমোটিভ কারখানার পাশাপাশি ২৫ একর জমিতে প্রায় ২,৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি সমপর্যায়ের কারখানা গড়ে তোলার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন কারখানা তৈরি হলে ইঞ্জিন মেরামত, জিওএইচ, বিশেষ মেরামত ও রিলিফ ট্রেনের কাজ দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।এতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে প্রায় ৭৫০ জনের।

পার্বতীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় প্রতিবছর অন্তত ৫১টি লোকোমোটিভ জেনারেল ওভারহোলিং (GOH) করার প্রয়োজন হয়।কিন্তু সক্ষমতার ঘাটতি ও দায়িত্বহীন ব্যবস্থাপনার কারণে ওভারহোলিং হয় মাত্র ২১টি।অর্থাৎ প্রাপ্য কাজের অর্ধেকও সম্পন্ন হয় না।

অন্যদিকে, অভিযোগ রয়েছে—বিদ্যমান কারখানায় নিয়মিত দুর্নীতি, অদক্ষতা, যন্ত্রাংশ কেনাবেচায় অনিয়ম এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী ট্রেড ইউনিয়নের দৌরাত্ম্যের কারণে কার্যক্রম সচল থাকে না।ফলে যে প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব, সেটি আজ “অর্ধেক সক্ষমতা” নিয়েই টিকে আছে।

যে কারখানাটি শতভাগ কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি, সেটির সংস্কার ও দুর্নীতি-অনিয়ম দমন না করে নতুন কারখানা বানিয়ে কী লাভ কার হবে?নতুন লোকোমোটিভ কারখানা নির্মাণ এসব সমস্যার কোনোটিরই সরাসরি সমাধান নয়।বরং এ উদ্যোগ আবারও “প্রকল্পনির্ভর অপচয়” হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেকেই বলছেন,নতুন কারখানা নির্মাণের পর  যদি একই অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা চলতে থাকে, তাহলে CLW-2 ও CLW-1 একই ভাগ্যবরণ করবে।

কয়েক বছর পর জানাযাবে রেলওয়ের পুরাতন সূর কারখানা সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার হচ্ছে না, কিংবা যন্ত্রাংশ নেই, ম্যানপাওয়ার নেই, বাজেট নেই।তাহলে কি এ উদ্যোগ প্রকৃতপক্ষে রেলওয়ের উন্নয়ন, নাকি নতুন একটি প্রকল্পের নামে টাকা খাওয়ার সুযোগ?রেল সেবার মান বাড়াতে সর্বপ্রথম রেলওয়েকে প্রশাসনিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করে কারিগরি প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তায় ফিরিয়ে আনা জরুরী।

বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়ন কেবল নতুন প্রকল্প আর বিলাসবহুল কারখানায় নয়, বরং কার্যকর ব্যবস্থাপনা, অনিয়ম দমন, এবং যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার মধ্যেই নিহিত।পার্বতীপুরে দ্বিতীয় লোকোমোটিভ কারখানা গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে একটি বড় উদ্যোগ, কিন্তু এটি রেলওয়ের প্রকৃত সংকট সমাধান করবে না।

এ মুহূর্তে রেলওয়ের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন—নতুন ইঞ্জিন, আধুনিক কোচ, কার্যকর রেললাইন সংস্কার এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার।নতুন কারখানা যদি রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক লুটপাটের নতুন কেন্দ্র হয়ে ওঠে, তাহলে এর ফল ভুগতে হবে গোটা জাতিকে।বাংলাদেশ রেলওয়ের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে বাস্তবতার ভিত্তিতে, প্রকল্পের চকচকে খোলস দেখে নয়। 

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ।