রেলপথে বালু পরিবহনে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ
আপডেটঃ ৩:০৬ অপরাহ্ণ | আগস্ট ২১, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রাকৃতিক বালু ও পাথরে সমৃদ্ধ জেলা পঞ্চগড়।সীমান্তঘেঁষা ছোট-বড় নদনদী বয়ে চলা এ অঞ্চলের সমতল ভূমিতে খনিজসম্পদ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা ট্রাকযোগে এই সম্পদ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করলেও সম্প্রতি রেলপথে বালু পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।তবে সম্ভাবনার এই দ্বার খুলতে না খুলতেই রেল বিভাগে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।ব্যবসায়ীরা বলছেন, মালবাহী ট্রেনে বালু পরিবহনের ট্যারিফ অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ আর্থিক সুবিধা দিতে হচ্ছে।ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, একটি দশ চাকার ট্রাকে ১০-১৫ হাজার টাকার বালু ঢাকা, গাজীপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়ায় পরিবহনে ব্যয় হয় প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা।সময়মতো ট্রাক না মেলায় ভোগান্তিতেও পড়তে হয়।
অন্যদিকে, একই পরিমাণ বালু রেলপথে পরিবহন করতে খরচ পড়ে ২৫-৩০ হাজার টাকা।বিশেষ করে যমুনা সেতু ব্যবহার করে সরাসরি ঢাকা পর্যন্ত রেলপথে বালু পরিবহন করলে পরিবহন খরচ ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় হয়।বর্তমানে পঞ্চগড় থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বালু সরবরাহে ব্যবহৃত মালবাহী ট্রেনের প্রতি ওয়াগনের ধারণক্ষমতা ৫৫ মেট্রিক টন।
শ্রমিকরা নির্ধারিত উচ্চতায় (ভেজা বালুতে ২৮ ইঞ্চি ও শুকনা বালুতে ৩৫ ইঞ্চি) বালু লোড করে থাকেন।কিন্তু ট্রেন চলাকালে ঝাঁকির কারণে ওজন কিছুটা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত কয়েক ইঞ্চি ওভারলোড করে দেন।এই সুযোগে রেল বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও আন্তঃদেশীয় বালু ব্যবসায়ীরা প্রতি ওয়াগনে অতিরিক্ত ৩০-৩৫ মেট্রিক টন বালু পরিবহন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফলে ট্রেনগুলো যান্ত্রিক ঝুঁকিতে পড়ার পাশাপাশি প্রতিটি মালবাহী ট্রেনে সরকারের প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।অভিযোগ রয়েছে, এই অতিরিক্ত লোড বৈধ করতে স্টেশন ইনচার্জ, জেটিআই, টিএক্সআর, আরএনবি ও এসআইসহ বিভিন্ন দপ্তরে ট্রেন প্রতি প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী ও রেল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুরুতেই বালু পরিবহনে দুর্নীতি শুরু হয়েছে এবং এটি এখন স্টেশনে সবার আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।তবে রেলপথে বালু পরিবহন শুরু হওয়ায় স্থানীয়ভাবে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
তারা মনে করেন, দুর্নীতি বন্ধ না হলে এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে, যার ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু হাসান বলেন, ওভারলোড ও ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি স্টেশনে ওপেন সিক্রেট।শুরুতে সবাই উৎসাহিত ছিল, কিন্তু এভাবে চললে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
আমরা চাই রেলের এই কার্যক্রম স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হোক।এদিকে বালু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসএস ট্রেডার্সের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান দাবি করেন, আমরা অতিরিক্ত লোড দিই না, ঘুষও দিই না।আমরা নিয়ম মেনে বালু পরিবহন করছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ইনচার্জ জাহেদুল ইসলাম ও জুনিয়র ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোশারফ হোসেন জানান, রেলপথে অতিরিক্ত বালু পরিবহন কিংবা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন।কিছু ব্যবসায়ী অবৈধ সুযোগ নিতে না পেরে এমন অভিযোগ করছেন।পরিবহন কার্যক্রম নিয়মতান্ত্রিকভাবেই পরিচালিত হচ্ছে।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।