রবিবার ৩রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে গেজেট ছাড়াই সাত বছর ধরে দ্বায়িত্ব পালনের অভিযোগ

আপডেটঃ ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ | জুলাই ২৮, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

দিনাজপুর:- দিনাজপুর রেলস্টেশনে গত সাত বছর ধরে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন এ বি এম জিয়াউর রহমান।তবে এই গুরুত্বপূর্ণ গেজেট পদে তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন।সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, তাঁর নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো গেজেট, প্রজ্ঞাপন বা লিখিত আদেশ পাওয়া যায়নি।স্টেশন কার্যালয়ে থাকা নামফলকেও ‘‘ভারপ্রাপ্ত’’ শব্দের কোনো উল্লেখ নেই।অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত বিধিমালায় বিশেষ করে রেলওয়ে অ্যাক্ট, ১৮৯০ এবং জিএস/জিআর রুল অনুযায়ী গেজেট পদে কেউ দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে হলে প্রয়োজন হয় যথাযথ নিয়োগ, লিখিত আদেশ ও অনুমোদনের।সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এভাবে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই।

এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিভিন্ন রেল কর্মকর্তার সঙ্গে। সিওপিএস আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া মুঠোফোনে এ বিষয়ে মন্তব্য না করে বলেন, ‘‘এই বিষয়ে (ডিটিও) দেখেন।’’ পরে লালমনিরহাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিটিও আবদুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে জানান, “তদন্ত করেছি, কিছু পাইনি।” তবে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।লাল মনির হাট বিভাগের ডিআরএম ও রাজশাহী-সিসিএম-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।দিনাজপুর রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করছে, দিনাজপুর রেলস্টেশনের দোকান বরাদ্দ, মাল বুকিং, ট্রাফিক সিগন্যালিং, ওভারটাইম বিলসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে রয়েছে অনিয়ম ও স্বচ্ছতার অভাব।অভিযোগ রয়েছে, দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ লেনদেন হয়, এবং স্থায়ী জনবল ছাড়াও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের দিয়ে মূল দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে।

প্রতিবছর স্টেশন উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও অন্যান্য খাতে লক্ষাধিক টাকার বাজেট বরাদ্দ হয়।কিন্তু স্থানীয় যাত্রীদের অভিযোগ স্টেশনের ছাদ জরাজীর্ণ, প্ল্যাটফর্মে পানি নেই, বাতি জ্বলে না, এবং শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী।সাধারণ যাত্রীদের প্রশ্ন এই বাজেট কোথায় ব্যয় হচ্ছে?
তথ্য অধিকার আইনে একাধিকবার স্টেশনের ব্যবস্থাপনাগত কাগজপত্র চাওয়া হলেও সেসব সরবরাহ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।কোথাও বলা হয়, “ফাইল মিসিং”, কোথাও বলা হয়, “আর্কাইভে নেই”।বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুসারে, একজন কর্মকর্তার একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি থাকা নীতিমালাবিরুদ্ধ।এ ছাড়া গেজেট পদে বিনা অনুমতিতে দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব পালনের সুযোগও নেই। তবে দিনাজপুর রেলস্টেশনে এ নিয়ম অনুসরণ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও যাত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, “স্টেশনে কোনো সেবার মান নেই। অভিযোগ করলেই হয়রানির শিকার হতে হয়।” কেউ কেউ বলেন, “তিনি অফিসার না, স্টেশনের মালিক এমন আচরণ করেন।”রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের নীরবতা ও তদন্তের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট মহল।তাদের ভাষ্য যেখানে প্রমাণ, সাক্ষ্য, এমনকি ভিডিও ফুটেজও রয়েছে, সেখানে কোনো তদন্ত না হওয়া এবং দায়ীদের চিহ্নিত না করার প্রবণতা প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তারই প্রতিচ্ছবি।একজন গ্রেড থ্রি স্টেশন মাস্টার এবিএম জিয়াউর রহমান গেজেট আদেশ ছাড়া সাত বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন এমন অভিযোগ কেবল একটি ব্যক্তিকে নয়, পুরো রেল প্রশাসনের কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দিনাজপুরের রেলওয়ে সন্মানিত যাত্রী সাধারণ এখন জানতে চান, এই অনিয়ম রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কে?

IPCS News : Dhaka : আব্দুস সালাম : দিনাজপুর।