সোমবার ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইলেন ইশরাক: বিএনপির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা প্রকাশ্যে

আপডেটঃ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ | মে ২১, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্য প্রশ্ন তুলেছেন দলের তরুণ নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি দলের দুজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে বলেন, “দলের বারবার ব্যর্থতার দায় যাঁরা নিচ্ছেন না, অথচ কৌশল নির্ধারণে ছায়া-নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জায়গা করে দেওয়া উচিত নতুন নেতৃত্বের জন্য।”

গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম, আন্দোলন এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।সেই প্রেক্ষাপটেই ইশরাক হোসেনের এই মন্তব্যকে অনেকেই বিএনপির অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে দেখছেন।ইশরাক সরাসরি নাম প্রকাশ না করলেও দলীয় সূত্র এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি মূলত বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ে থাকা দুই অভিজ্ঞ উপদেষ্টার দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যারা সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় সিদ্ধান্তে সরাসরি প্রভাব রেখেছেন।

তিনি বলেন, “যাঁরা বিগত কয়েকটি রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের সিদ্ধান্তেই মাঠে নেমে বারবার ব্যর্থ হয়েছি আমরা।কিন্তু তাঁরা কখনো জনগণের সামনে আসেননি, বা ব্যর্থতার দায়ও নেননি। এটা রাজনৈতিকভাবে অনৈতিক।”তিনি আরও বলেন, “দল যখন চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা বলে, তখন মাঠে থাকে শুধু কর্মী, অথচ নেতৃত্বে থাকেন সোফার আরামদায়ক ছায়ায় থাকা কিছু মানুষ।এই বৈপরীত্য বিএনপির ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।”

ইশরাকের এমন বক্তব্য প্রকাশের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে তরুণ ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।অনেকে এই অবস্থানকে সাহসী ও বাস্তবসম্মত বলেছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন এটি প্রকাশ্যে বলার চেয়ে দলের ভেতরেই আলোচনার মাধ্যমে তোলা উচিত ছিল।দলীয় হাইকমান্ড এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।তবে সংশ্লিষ্ট দুই উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করেছে, “ইশরাকের মন্তব্য তার ব্যক্তিগত হতাশা থেকে এসেছে।রাজনীতিতে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বার্তা দলীয় ঐক্য বিনষ্ট করতে পারে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, “বিএনপির অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের সংকট বহুদিনের। কিন্তু এবার একজন তরুণ নেতা যখন সরাসরি পদত্যাগ দাবি করছেন, তা দলটির ভবিষ্যতের দিকেই বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।এটি কেবল ব্যক্তি বা উপদেষ্টা-পর্যায়ের নয়, এটি নেতৃত্বে পরিবর্তনের একটি সূচনাবিন্দু হতে পারে।”তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে চললেও, সাম্প্রতিক সময়ে দলটির সাংগঠনিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। মাঠের রাজনীতি, আন্দোলন, নির্বাচন—কোনোটিতেই উল্লেখযোগ্য সফলতা আসছে না। এতে করে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের ভেতরে হতাশা তৈরি হয়েছে, যা ইশরাকের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

একজন মধ্যম পর্যায়ের নেতা বলেন, “আমরা চাই দল শক্তিশালী হোক, কিন্তু বারবার এক নেতার ভুল সিদ্ধান্তে আমাদের আন্দোলন ভেস্তে যাচ্ছে। ইশরাক যা বলেছেন, সেটা আমাদের অনেকের মনের কথা।”তবে এমন স্পষ্ট বক্তব্য দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখবে না বরং বিভক্তির আশঙ্কা বাড়াবে বলেও মত দিয়েছেন অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা। তাঁরা মনে করেন, দলের ভেতরের সমালোচনার জায়গাগুলো পারস্পরিক আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

তবে একটি ব্যাপার স্পষ্ট ইশরাক হোসেনের বক্তব্য শুধু একটি ব্যক্তিগত হতাশা নয়, বরং দলের নীতিনির্ধারকদের প্রতি মাঠ পর্যায়ের নেতাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের একটি প্রকাশ।এখন দেখা যাক, বিএনপি এই সংকেতকে কীভাবে নেয় সংস্কারের সুযোগ হিসেবে, নাকি বিদ্রোহী সুর হিসেবে দমন করার চেষ্টা করে।

IPCS News : Dhaka :