১.৭৫ লাখ কোটি টাকার ঋণ খেলাপ: অর্থনীতির বুকে গভীর ক্ষত
আপডেটঃ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | মে ২১, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ
গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণের নামে লুটপাটের এক ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে।বিভিন্ন আর্থিক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে ভুয়া ও অনাদায়ী ঋণের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এ অর্থের বড় একটি অংশ আদায়যোগ্য নয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।বরং এটি দীর্ঘদিনের একটি পদ্ধতিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ফল।ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদ, রাজনৈতিক মহল এবং কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী মিলেই পরিকল্পিতভাবে এই অর্থ লোপাট করেছে।এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় জামানত ছাড়াই শত শত কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে যেগুলোর কোনো কার্যক্রমই ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রথম দিকে এই অনিয়ম ছোট আকারে শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।২০০৯ সালে যেখানে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা, তা ২০২৪ সালে এসে ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।বিভিন্ন সময়ে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ কয়েকটি আলোচিত কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ্যে এলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইনি প্রক্রিয়া ছিল ধীরগতির এবং অপরাধীরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এই লুটপাটের প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট বেড়েছে, ঋণ বিতরণে অনীহা তৈরি হয়েছে, বিনিয়োগ কমেছে এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নতুন ঋণ পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন।একই সঙ্গে আমানতকারীদের আস্থাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।একজন গ্রাহক বলেন, “ব্যাংকে টাকা রাখতেও এখন ভয় লাগে, কখন জানি শুনি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে।”
অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, একটি গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটও।তারা বলছেন, রাষ্ট্র যদি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধসে পড়তে পারে এবং সাধারণ জনগণের সম্পদ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তারা ব্যাংক কমিশন গঠন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বাড়ানো এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
যদিও মাঝে মাঝে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে, বাস্তবতার আলোকে খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যায়নি।একাধিক খেলাপি ঋণগ্রহীতা আজও প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে এবং কেউ কেউ নতুন করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগও পাচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কাই এখন সাধারণ মানুষের থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ পর্যন্ত সকলের কণ্ঠে।বিশাল এই অর্থ লুটের দায় রাষ্ট্র ও নীতিনির্ধারকদেরও নিতে হবে এমনটাই মনে করছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
IPCS News : Dhaka :