সোমবার ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

সড়ক আইনে নিষিদ্ধ হলেও রাস্তার দু’পাশে হাট-বাজার,যানজটের পাশাপাশি ঘটছে দূর্ঘটনা

আপডেটঃ ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ | জানুয়ারি ২২, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে সড়ক ও মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী অবৈধ হাটবাজার, স্থাপনা ও পার্কিং অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এক বছর আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশের উচ্চ আদালত।কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। রাজশাহী জেলা ও খোদ মহানগরীতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট-বাজারের সংখা প্রায় শতাধিক।এসব হাট-বাজারে আসা ছোট ছোট যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনের কারণে তীব্র আকার ধারণ করছে যানজট।এছাড়া নগরীর মধ্যে রাস্তায় বসা বাজার গুলোতে যানজটের পাশাপাশি  মাঝেমধ্যেই ঘটছে  দুর্ঘটনা।

রাজশাহী জেলা শহরের মধ্যে রাস্তার উপরে বসে প্রায় অর্ধশতাধিক বাজার।এর মধ্যে রয়েছে, গোদাগাড়ী, মহিষালবাড়ী,রাজাবাড়ী হাট, কাকনহাট, তানোর,মন্ডুমালা,মৌগাছি,মোহনপুর,শিবপুর,বাগমারা,পুঠিয়া বজার,চারঘাট বাজার,বানেশ্বর বাজার , তানোর ও মন্ডুমালা বাজার।রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে রয়েছে,বায়া বাজার,নওদাপাড়া বজার,খড়খড়ী বাইপাস বাজার,মেহেচন্ডী,শিবপুর ও ,কশিয়াডাঙ্গা বাজারএবং খোদ মহানগরীতে রয়েছে,তালামারী বাজার,কাঁটালী বাজার,সাহেববাজার,জিরোপয়েন্ট,কোট বাজার,শালবাগান বাজার,নওদাপারা বাজার, ও সাগরপাড়া বাজার। এই বাজার গুলো রাস্তার দুপাশে গড়ে উঠায় পথচারী ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে,ঘটে দূর্ঘটনা।

অথচ সড়ক আইনে বলা হয়েছে,সড়কের দুই পাশে ১০ মিটারের মধ্যে হাট-বাজার কিংবা স্থায়ী বা অস্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা ২০২১ সালের মহাসড়ক আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।এর জন্য অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।আইনটি প্রয়োগ করতে গিয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা বিভিন্ন সময়ে মহাসড়কের আশপাশে থাকা হাট-বাজার ও অবৈধ অবকাঠামো অপসারণও করেন। তবে প্রকৌশলীদের অভিযোগ, অপসারণের মাস খানেকের মধ্যে পুনরায় এ ধরনের স্থাপনা গড়ে ওঠে। আর সেটিও হয় ‘আইনসিদ্ধ’ভাবেই।

কেননা ২০২৩ সালের হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইনের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে হাট ও বাজার স্থাপন করতে পারে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।জানা গেছে দুই আইনের সাংঘর্ষিক অবস্থার কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কসহ প্রায় সব সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাট-বাজারসহ অবৈধ স্থাপনা ও অবকাঠামো।এসব স্থাপনা ও অবকাঠামোকে মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে অভিহিত করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।মহাসড়কের অন্য এলাকার তুলনায় হাট-বাজার ও অবৈধ স্থাপনাপ্রবণ এলাকাগুলোয় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি বলেও জানিয়েছেন তারা।

সড়ক আইন ও হাট-বাজার আইনের মধ্যকার সাংঘর্ষিক ধারার কারণে দেশের সড়ক-মহাসড়ক থেকে হাট-বাজার অপসারণের কাজটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ঠরা।সম্প্রতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক এক সভায় তিনি বলেন, ‘‌সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সীমারেখার মধ্যে কোনো ধরনের স্থাপনা করা যাবে না।

অন্যদিকে হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২৩-এ বলা হয়েছে, যিনি ইজারা দেবেন, ডিসি অফিস বা অন্য কেউ, ওনারা যেকোনো স্থানে হাট-বাজার স্থাপন করতে পারবেন।এটা আমাদের একটা বড় চ্যালেঞ্জ।আমরা বিভিন্ন স্থানে অবৈধ হাট-বাজার উচ্ছেদ করি।কিন্তু দেখা যায় মাস খানেক পর ওই স্থানে আবার হাট-বাজার বসিয়ে দেয়া হয়।দুই আইনের মধ্যে কনফ্লিক্ট থাকায় মহাসড়কের পাশে অবৈধ হাট-বাজার অপসারণ করতে গিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমূখি হতে হয়। 

অবৈধ হাটবাজার, স্থাপনার কারণে বিশৃঙ্খল ও দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে দেশের সড়ক-মহাসড়ক।সড়কগুলোয় প্রয়োজনীয় সাইন সিগন্যাল না থাকা, নকশাগত ত্রুটি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।আবার ফিটনেসবিহীন যানবাহন, থ্রি-হুইলার ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাসহ নানা ব্যবস্থাপনাগত কারণেও ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মাসভিত্তিক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের তথ্য যোগ করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৫ হাজার ৪৮০ জন, যা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।যদিও সড়কে বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্ঘটনা রোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কেবল বিষয়টি নিয়ে সভা-সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন এ মন্ত্রণালয়।

দেশের সড়ক-মহাসড়কের পাশে কী পরিমাণ হাটবাজার ও অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সওজ অধিদপ্তর পরিচালিত রোড সেফটি অডিট রিপোর্ট থেকে দেশের কয়েকটি জাতীয় মহাসড়কে হাটবাজারসহ অবৈধ স্থাপনার তথ্য পাওয়া গেছে।সংস্থাটির তথ্য বলছে, কাশিনাথপুর-রাজশাহী (এন-৬) মহাসড়কে হাটবাজার রয়েছে ৩৭টি স্থানে। প্রতিবন্ধক রয়েছে ১৩৬টি স্থানে।মহাসড়কের পাশে বাজারভিত্তিক কর্মচাঞ্চল্য কখনই গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।দেশের মহাসড়কগুলো আদতে মহাসড়ক নয়।মহাসড়কের মানদণ্ডে রাস্তার অন্তত ১০০ মিটারের মধ্যে হাটবাজার কোনোভাবেই যায় না।’

‘‌কোথাও একবার বাজার গড়ে উঠলে সেটি অপসারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।’ সড়কের পাশে গড়ে ওঠা হাটবাজার অপসারণ করার পাশাপাশি আইনটি সংশোধন করে রাস্তার অন্তত ১০০ মিটারের মধ্যে হাটবাজার গড়ে তোলার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ কার্যকর করতে হবে।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।