কলেজ ছাত্রকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা
আপডেটঃ ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ | জানুয়ারি ১৮, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- রাজশাহীতে পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে এক কলেজছাত্রকে আটকে রেখে সমন্বয়ক পরিচয়ে তিন তরুণ দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় খবর পেয়ে পুলিশ নগরীর উপশহরে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ঐ কলেজ ছাত্রকে উদ্ধার করে।
এসময় ৩ জন অপহরন কারিকে আটক করে থানায় নেয়া হয়।আটক কৃতরা হলেন, নাটোর সদরের জাহিদুল ইসলাম (২০), তাহাসান হোসেন আকাশ (২১) ও চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের শাহাদাত হোসেন (২৭)।তারা রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম ফাহিম হোসেন জীম (১৭)।তিনি রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।তবে,আটক শাহাদাত হোসেন মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কোনো টাকা-পয়সা দাবি করিনি।আমি শুধু ওকে (জীমকে) বলেছি, তোমার বন্ধু ছাত্রলীগ করে তাকে এনে দাও।তারপর তুমি চলে যাও।’ অন্ধকারে পরিত্যক্ত বাসায় কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যখন আসি তখন অন্ধকার ছিল না।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন জীম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত আমি আন্দোলনে ছিলাম।কিছুদিন ধরে আমাকে বার বার কল করা হচ্ছিল।বলা হচ্ছিল, আমি নাকি ছাত্রলীগ করি।আমি নগর ভবনের সামনে ছিলাম।সেখান থেকে আমাকে তুলে আনা হয়েছে।আনার পরে মারধর করে।বলে, আমার সঙ্গে নাকি ছাত্রলীগের যোগাযোগ আছি।তারা আমার কাছে চাঁদাও দাবি করেছিল।পরে আমি আমার দুজন বন্ধুকে ডাকলাম। আমার বন্ধুরা এসে লোকজন ডেকে আমাকে উদ্ধার করল।’
জীমকে উদ্ধারে গিয়েছিলেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান কাফি।তার বাড়ি উপশহরেই।কাফি বলেন, ‘আমরা খবর পাই যে সাবেক মেয়রের পরিত্যক্ত বাড়ির গ্যারেজে এক ছাত্রকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।’কাফি বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি, ওই ছাত্রকে গ্যারেজে অন্ধকারের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে।আমি ওই তিনজনের পরিচয় জানতে চাই।তখন তারা নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দেয়। বলে, ওপরের নির্দেশ আছে এই ছেলেকে ধরার জন্য। তার বন্ধু ছাত্রলীগ করে। একে ধরলে তার বন্ধুকে পাওয়া যাবে।আমি তাদের কাছে ওপরের নির্দেশটিই দেখতে চাই।কিন্তু তারা কোনো নির্দেশনা দেখাতে পারেনি।এরই মধ্যে পুলিশ চলে আসে।পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এরা যে ছেলেটিকে ধরে আনে সে ছাত্রলীগ না। মোবাইলে ছবি দেখলাম সে নিজেই আন্দোলনে ছিল। ছেলেটির কাছে প্রথমে দেড় লাখ এবং পরে এক লাখ টাকা দাবি করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই তিনজন নিজেদের তাহাস নূর নামে একজনের লোক বলে পরিচয় দেয়। তাহাস ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগর ভবন পাহারার দায়িত্বে ছিলেন।’
তাহাস নূর রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি। ওই তিনজন আন্দোলনের সময় আমার সাথে ছিল।আমরা একসঙ্গে নগর ভবন পাহারা দিয়েছি। তারা আমাকে জানায় যে, তারা একজন ছাত্রলীগকে ধরেছে। আমি তাকে পুলিশে দেয়ার জন্য বলেছিলাম। পরে কী হয়েছে সেটা আমি বলতে পারব না।’
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘শুনলাম যে সমন্বয়ক পরিচয়ে এক কলেজছাত্রকে সাবেক মেয়রের পরিত্যক্ত বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করেছে। তিন জনকে থানায় আনা হয়েছে। ভুক্তভোগী ছেলেটি চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। আমরা মামলা গ্রহণ করব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জি কে এম মেশকাত চৌধুরী মিশু বলেন, ‘তাহাসের সঙ্গে আমার ৫ আগস্টের পর পরিচয়। সে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগর ভবন পাহারা দিত। তার ছেলেরা কাউকে জিম্মি করেছিল, এমন কোনো খবর আমি পাইনি।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।