বোরো মৌসুমেই রাজশাহী অঞ্চলে বিএমডিএ’র সেচ অপারেটরদের শত কোটি টাকার বানিজ্য
আপডেটঃ ৮:৪১ অপরাহ্ণ | এপ্রিল ০১, ২০২২
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মৌসুমে বোরোর ধান চাষের জন্য কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।এরই মধ্যে যেন মাঠে মাঠে সবুজ ধানের বান ডেকে এনেছে।কোনো জমিতে ধানের ফুল আসতে শুরু করেছে।আবার কোনো কোনো জমিতে ধানগাছ থোড় (মোচা) আসতে শুরু করেছে।আবার কোনো জমিতে থোড় থেকে ফুলও আসছে।এক কোথায় মাস খানেক পরেই রাজশাহীতে শুরু হবে ধান কাটা মৌসুম।কৃষকরা এ নিয়ে যতটা উচ্ছ্বসিত, ততটায় চিন্তিত জমিতে পানি সেঁচে দেওয়ার জন্য গভীর নলকূপের টাকা পরিশোধ নিয়ে।এর ওপর রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা।কয়েকদিন ধরে অনুসন্ধানে দেখা গেছে রাজশাহী অঞ্চলে এই বোরো ধান চাষ করতে গিয়ে বিঘা প্রতি কৃষকদের গড়ে অন্তত এক হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে পানি সেঁচের জন্য। আর সেই হিসেবে কেবল রাজশাহীর ৯ উপজেলার কৃষকদের নিকট থেকে অন্তত ৩৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে।
আর গোটা রাজশাহী অঞ্চলে আদায় করা হবে অন্তত শত কোটি টাকা।এরই মধ্যে কৃষকদের নিকট থেকে টাকা আদায় শুরু হয়েছে।ধান কাটার আগ মুহুর্তে সমস্ত টাকায় পরিশোধ করতে হবে কৃষকদের।সেই টাকা চলে যাচ্ছে বিএমডিএ’র নিয়োগকৃত গভীর নলকূপ তত্বাবধায়নকারী অপারেটরদের পকেটে।যারা সকলেই বিএমডিএ’র উপজেলা কার্যালয় থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত।
বিএমডিএ’র দেওয়া তথ্য মতে, শুধু রাজশাহীতে এবার বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) দুই হাজার ৮২৬টি গভীর নলকূপের আওয়াতায় বোরো ধান চাষ হচ্ছে ৪১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।সেই হিসেবে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে।এর বাইরে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে আরও কয়েক লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হচ্ছে।
বিএমডিএ’র দেওয়া তথ্য মতে, একটি গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য এক কিওসেক পানি উত্তোলনের মোটার প্রতি ঘন্টায় ১১৫ টাকা এবং দুই কিওসেক মোটার প্রতি ১২৫ টাকা করে আদায় করছে বিএমডিএ।তাতে করে এক বিঘা জমিতে পানি সেঁচ দিতে গিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়।কিন্তু রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর, মোহনপুর, তানোর, গোদাগাড়ী, বাগমারা, চারঘাট, বাঘা ও পবা উপজেলার কৃষকদের বিঘাপ্রতি গুনতে হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।আর তাতেই এ জেলার কৃষকদের নিকট থেকে দুই হাজার ৮২৬ জন অপারেটরের পকেটে ঢুকবে অতিরিক্ত অন্তত ৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
গোদাগাড়ীর ঋষিকুল এলাকা এলাকার কৃষক আজমত আলী বলেন, ‘এমনিতেই ধান চাষ করে তেমন লাভ হয় না।কোনো বার দুই-চার হাজার টাকা বিঘাপ্রতি লাভ হলেও; দেখা যাচ্ছে পরের বার আবার লস (লোকসান) হচ্ছে হয়।কিন্তু এ বছর জমিতে পানি দিতেই প্রতি বিঘাতে তিন হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।এর ওপর এবার সবকিছুর দাম বেড়েছে।আবার প্রাকৃতি দুর্যোগের আশঙ্কাও আছে মাথায়।তাই এবার ধান চাষ করে কতটা লাভ হবে না লস হবে বুলতে পারছি না।
তানোরের কলমা এলাকার কৃষক নাদের আলী বলেন, ‘ধানে থোড় আসতে শুরু করেছে।মাস খানেক পরে হয় তো কাটা শুরু হবে।কিন্তু কাটার আগেই ডিপের (গভীর নলক’পের) টাকা পরিশোধ করতে হবি।টাকা না দিলে ধান কাটতে য্যাতেও পারব না।তাই চিন্তাই আছি।তবে যে হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে, এতো টাকা লাগার কথা নয়।কিন্তু অপারেটররা বিঘাপ্রতি ২২০০ টাকা করে ধরেছে, সেটিই দিতে হবে।
পবার বড়গাছী এলাকার কৃষক আবু কালাম বলেন, ‘এতো টাকা তো পানি সেঁচ দিতে লাগে না।কিন্তু কোনো উপায় নাই, ধান চাষ করতে হলে ওই টাকা দিতেই হবে।তাই বাধ্য হয়ে দিই।’তানোরের লবলবি এলাকার গভীর নলকূপ অপরেটর মুকুল হোসেন কৃষকদের নিকট প্রিপেইড কার্ড নিয়ে সেই পরিমান পানি সেঁচ দিচ্ছেন জমিতে।কিন্তু বিঘাপ্রতি নলকূপের ভাড়া হিসেবে আদায় করছেন ৭০০ টাকা করে।
ফলে এই ৭০০ টাকা প্রতিবিঘায় বেশি দিতে হচ্ছে প্রত্যেক কৃষককে।জানতে চাইলে মুকুল হোসেন বলেন, ‘একটি ডিপ চালাতে গিয়ে নানা খরচ হয়।কাজেই ৭০০ টাকা বেশি আয় হলেও খুব একটা টাকা পকেটে থাকে না।এ উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকার অপারেট আয়েজ উদ্দিন বিঘাপ্রতি আদায় করছেন ১৮ শ থেকে দুই হাজার টাকা করে।ফলে তাঁর পকেটেও ঢুকবে বিঘাপ্রতি অন্তত এক হাজার টাকা।
জানতে চাইলে আয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যুৎ খরচ বেশি।তাই এবার একটু টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।এদিকে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে ছালমা জানান, এ বছর রাজশাহীতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে।এ পরিমাণের চেয়েও বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে।এর মধ্যে অধিকাংশ জমিতেই বিএমডিএ’র গভীর নলক’পের মাধ্যমে পানি সেঁচে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে জানতে চাইলে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমরা কোনো ফি নির্ধারণ করে দেয় না।স্থানীয় সেঁচ কমিটি জমির ধরণ অনুযায়ী টাকা নির্ধারণ করেন।কিন্তু অতিরিক্ত টাকা আদায় হচ্ছে এমন অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ করে না।অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী।