রবিবার ২২শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

সীমান্তের নীরব যন্ত্রণা: এক রাতেই পুশ-ইন ২০ জন, কে নেবে দায়?

আপডেটঃ ১২:১০ অপরাহ্ণ | জুন ১৮, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আরও ২০ জন বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দিবাগত রাতে বাগডাঙ্গা ও মাসুদপুর সীমান্ত পয়েন্টে এই ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোরবেলা হঠাৎ অচেনা কিছু নারী, শিশু ও পুরুষকে সীমান্ত এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।এদের মুখে আতঙ্ক, গায়ে মলিন পোশাক, এবং অধিকাংশের কাছেই কোনো বৈধ পরিচয়পত্র ছিল না।পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের একজন জানান, তারা ভারতের নদীয়া জেলার একটি বন্দীশিবিরে ছিলেন কয়েক মাস ধরে। ঠাৎ করেই বিএসএফ সদস্যরা এসে বলেন, ‘তোমরা বাংলাদেশি, চলে যাও তোমাদের দেশে।’কোনো কাগজপত্র ছাড়াই সীমান্তে এনে ফেলে যাওয়া হয় তাদের।একজন নারী জানান, তার তিন বছরের সন্তানসহ তিনি চারদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন, না আছে খাবার, না কোনো আশ্রয়।

স্থানীয়রা এই ঘটনাকে অসাধারণ এক নীরব সংকট হিসেবে দেখছেন।বিজিবির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, সীমান্তরক্ষীরা পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের হেফাজতে নিয়েছে এবং যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানা গেছে।তবে এই আচরণকে স্থানীয়রা ‘মানবিক লঙ্ঘন’ এবং বাংলাদেশের ‘সার্বভৌমত্বের প্রতি অবমাননা’ হিসেবে দেখছেন।মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব মানুষ রাষ্ট্রবিহীন হয়ে পড়েছে।তাদের না আছে ভারতে নাগরিকত্ব, না আছে বাংলাদেশের পরিচয়। ফলে তারা কেউই কোনো রাষ্ট্রের দায়িত্বের আওতায় নেই।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ অনুসারে, এভাবে কোনো মানুষকে জোর করে একটি দেশে পাঠিয়ে দেওয়া বৈধ নয়।এটি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর জনগণের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।তারা মনে করছেন, পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বা এদেরকে ব্যবহার করা হতে পারে মানবপাচারের উদ্দেশ্যে।আবার কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে সীমান্তের নিরাপত্তাকে আরও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিনের ভারত-বাংলাদেশ ‘মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্ক’-এর পেছনে থাকা বাস্তবতা এখন প্রশ্নের মুখে।বন্ধুত্বের মুখোশের আড়ালে সীমান্তে যে এভাবে একতরফা ও অমানবিক আচরণ চলতে পারে, তা কেউ আশা করেননি।এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা না হলে এই পুশ-ইন হবে শুধু একটি ‘সংখ্যা’, যা প্রতিবারই বাড়বে, কিন্তু এর পেছনের মানবিক চিত্র থেকে যাবে উপেক্ষিত।

IPCS News : Dhaka :