বৃহস্পতিবার ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ আজ, তফসিল ঘোষণা ঝুঁকছে বৃহস্পতিবারে

আপডেটঃ ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ | ডিসেম্বর ১০, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক প্রস্তুতি জানাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বুধবার সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ার পাশাপাশি কমিশনের প্রস্তুতিও এখন শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সাক্ষাৎকে ঘিরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির আলোচনা এবং পরবর্তীকালের তফসিল ঘোষণার সময়সীমা আজ দিনজুড়ে ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

ইসি সূত্র জানায়, একই দিনে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারের জন্য সিইসির জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ রেকর্ড করা হবে। এই ভাষণের মাধ্যমেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। যদিও ভাষণ রেকর্ডের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তবে আজ তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা কম বলেই কমিশনের ভেতরের সূত্রের দাবি। বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করার দিকে ঝুঁকছে ইসি, আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে ১১ অথবা ১২ ফেব্রুয়ারির যেকোনো একদিন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে এখনও কেউ রাজি হননি।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ্দিন জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে আজ রাতেই বা বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণায় যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় তার সব প্রস্তুতি কমিশন প্রায় সম্পন্ন করেছে। অন্যদিকে, সিইসি এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন, যা নির্বাচনের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করারই অংশ। নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূল করতে এসব সাক্ষাৎকে কমিশনের কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণার আগের প্রস্তুতিগুলো যাচাই করতে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা একাধিক বৈঠক করেন। সেদিনই নির্বাচনের প্রধান আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি এবং নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার সংশোধনী এখনো গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি। কমিশন বলছে, এসব বিধিমালাও দ্রুত জারি করা হবে, যাতে তফসিল ঘোষণার পর কোনো প্রশাসনিক জট না থাকে।

কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আসন বিন্যাস, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন, নির্বাচনী তদারকির সঙ্গে সম্পর্কিত ২০টির মতো পরিপত্র—সবকিছুর ফরম্যাট প্রস্তুত আছে। তফসিল ঘোষণার পরপরই এসব প্রজ্ঞাপন ধারাবাহিকভাবে জারি করা হবে। তার ভাষ্যে, নির্বাচন পরিচালনায় মাঠ প্রশাসন, মোবাইল কোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সেল এবং মনিটরিং সেল গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতিও চূড়ান্ত ধাপ পার করেছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো এবার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তার মতে, নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল থাকলে বড় চ্যালেঞ্জগুলো সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন বাড়লে ইসির জন্য পরিস্থিতি কঠিন হতে পারে। তফসিল ঘোষণার পরপরই রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে সেটিই হবে পর্যবেক্ষণের মূল বিষয়।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। ভোটকেন্দ্র থাকবে ৪২ হাজার ৭৬৬টি এবং ভোটকক্ষ দুই লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫টি। যেহেতু একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাই প্রতি ভোটকক্ষে দুটি গোপন ভোট ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। যেসব কেন্দ্রের অবকাঠামোতে দুটি ভোটঘর তৈরি করা সম্ভব নয়, সেখানে বাড়তি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হবে। ফলে চূড়ান্তভাবে ভোটকক্ষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এদিকে, নির্বাচন আয়োজনের অন্যান্য প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক প্রস্তুতিও শেষ করেছে কমিশন। নতুন রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, আইন সংশোধন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং প্রবাসী ভোটারদের জন্য আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট চালুর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সীমানা নিয়ে আদালতে এখনও ৩০টির বেশি রিট থাকলেও নির্বাচন কমিশন মনে করছে, এসব রিট তফসিল ঘোষণায় কোনো বাধা তৈরি করবে না।

IPCS News : Dhaka :