শনিবার ২রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাশিয়ার ড্রোন হামলায় কাঁপলো ইউক্রেন, নিহত অন্তত ২০

আপডেটঃ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | জুলাই ৩১, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

কিয়েভ, ৩১ জুলাই ২০২৫: ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার চালানো ড্রোন হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।আজ ভোররাতে রাশিয়া একযোগে বহু কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর হামলা চালায়।সরকারি সূত্র জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত এবং আরও ৫৫ জন আহত হয়েছেন।হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হামলার পরপরই কিয়েভ, খারকিভ, লভিভ এবং ডনবাস অঞ্চলে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড দেখা দেয়।স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি সেবা বিভাগের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিটস্কো জানান, শহরের কেন্দ্রস্থলের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং হাজার হাজার মানুষ এখন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে।রাশিয়ার এই হামলা শুধু সামরিক স্থাপনাগুলোকে নয়, বেসামরিক অবকাঠামো এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।কিছু ড্রোন হাসপাতাল এবং স্কুলের কাছাকাছি বিস্ফোরিত হওয়ায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এবং ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিধ্বস্ত ভবন, ধোঁয়ার কুন্ডলী এবং রাস্তায় আহত মানুষের করুণ দৃশ্য।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক জরুরি বিবৃতিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,”রাশিয়ার এই আক্রমণ প্রমাণ করে তারা আমাদের জনগণকে ধ্বংস করতে চায়।এটি যুদ্ধ নয়, এটি এক নির্মম সন্ত্রাস।”তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের ঘোষণা দিয়েছেন।

ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ৪০টির মধ্যে ২৭টি ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।তবে কিছু উচ্চগতির ড্রোন প্রতিরক্ষা ভেদ করে নির্ধারিত লক্ষ্যে বিস্ফোরণ ঘটায়।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ড্রোনগুলো ছিল ইরানে তৈরি “শাহেদ-১৩৬”, যা রাশিয়া বিভিন্ন সময় ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করেছে।

হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন শহরে সতর্কতা সংকেত বাজানো হয়েছে।কিছু এলাকায় লোকজনকে বাঙ্কারে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অনেক এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জোরালো।ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং কানাডা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলাকে “যুদ্ধাপরাধের আশঙ্কাজনক নিদর্শন” বলে অভিহিত করেছেন এবং অবিলম্বে শান্তি আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের কিছু সাফল্যের পর রাশিয়া পাল্টা প্রতিশোধমূলক হামলার অংশ হিসেবে এই ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে।তবে এই হামলার প্রভাব শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, সাধারণ মানুষের মনোবল ও জীবনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।

এখনো পর্যন্ত রাশিয়ার পক্ষ থেকে হামলার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।তবে পূর্ববর্তী হামলাগুলোর মতো এবারও তারা হয়তো নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে আক্রমণ চালানোর কথা বলবে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এই ঘটনার পর ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।মানবিক সংকট বাড়ছে, এবং শীতের আগে যদি পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটে, তবে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ মারাত্মক আকার নিতে পারে।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর এখন চাপ বাড়ছে যেন তারা আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয় এবং এই সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌছানোর পথ তৈরি করে।

ইতোমধ্যে ইউক্রেনজুড়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলগুলো পুনরায় সক্রিয় হয়ে পড়েছে।বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামত, আহতদের চিকিৎসা এবং আশ্রয়হীনদের সেবা দেওয়ার জন্য দেশজুড়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।ইউক্রেনীয় জনগণের একটাই বার্তা তারা সহজে হার মানবে না।

IPCS News : Dhaka :