যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনে টানা দ্বিতীয় দিনে বাতিল ১ হাজার ৪০০ ফ্লাইট
আপডেটঃ ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ০৯, ২০২৫
নিউজ ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ শাটডাউন বা সরকারি অচলাবস্থার কারণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবার (৮ নভেম্বর) ১ হাজার ৪০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, আর বিলম্বিত হয়েছে আরও কয়েক হাজার বিমানযাত্রা। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ার জানিয়েছে, শুক্রবার যেখানে প্রায় সাত হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছিল, শনিবার সেই সংখ্যা ছয় হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
রোববার (৯ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে চলমান সরকারি অচলাবস্থা ৩৯তম দিনে গড়িয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউন হিসেবে রেকর্ড গড়েছে। ১ অক্টোবর শুরু হওয়া এই অচলাবস্থা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কংগ্রেসে অর্থায়ন ইস্যুতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় সরকারি কার্যক্রমের বড় অংশ স্থবির হয়ে পড়েছে।মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ইতিমধ্যে জানিয়েছে, বেতন ছাড়া কাজ করা বিমান নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে চরম ক্লান্তি দেখা দেওয়ায় দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ৪০টি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হচ্ছে। সংস্থাটি ধীরে ধীরে ফ্লাইট বাতিলের হার বাড়াচ্ছে শুক্রবার ৪ শতাংশ, ১১ নভেম্বর ৬ শতাংশ, ১৩ নভেম্বর ৮ শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে।
এফএএ জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে, কারণ বেতন না পাওয়ায় অনেক নিয়ন্ত্রক অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিচ্ছেন বা বিকল্প আয়ের জন্য অতিরিক্ত কাজ করছেন। এর ফলে টাওয়ারগুলিতে জনবল ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যা বিমান চলাচলের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।শনিবার সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে শার্লট/ডগলাস ইন্টারন্যাশনাল, নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং শিকাগো ও’হেয়ার ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে। নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি বিমানবন্দরে দেখা গেছে সবচেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার সময়, যেখানে শনিবার বিকেল পর্যন্ত আগত ফ্লাইটগুলো গড়ে চার ঘণ্টার বেশি দেরিতে অবতরণ করেছে এবং ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলোও দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বিত হয়েছে।
জন এফ কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল, হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা ইন্টারন্যাশনাল এবং লা গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকেও ফ্লাইট ছাড়তে যথাক্রমে তিন ঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা ও এক ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছে এফএএ। শুধু বাণিজ্যিক বিমান নয়, ব্যক্তিগত জেট চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। পরিবহন মন্ত্রী ডাফি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোয় ব্যক্তিগত জেটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। তাদের ছোট বিমানবন্দর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়।”
শাটডাউনের প্রভাবে শুধু বিমান চলাচল নয়, দেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। খাদ্য সহায়তা, সামাজিক নিরাপত্তা ও পরিবহন খাতেও ব্যাঘাত ঘটছে। ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি এজেন্সি (টিএসএ)-এর প্রায় ৬৪ হাজার কর্মীর বেশিরভাগই বেতন ছাড়া কাজ করছেন, যা বিমানবন্দর নিরাপত্তায়ও প্রভাব ফেলছে।২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কার শাটডাউনের মতো এবারও একই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে—সেই সময় টিএসএ কর্মীদের প্রায় ১০ শতাংশ কাজ বন্ধ করে ঘরে অবস্থান করেছিলেন। এবারও অনেক কর্মী একই পথে হাঁটতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার আমেরিকান এয়ারলাইনস এক বিবৃতিতে ওয়াশিংটনের নেতাদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “অচলাবস্থা অবসানে অবিলম্বে রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে হবে। দীর্ঘ শাটডাউন শুধু বিমান চলাচল নয়, দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জীবনযাত্রাকেও বিপর্যস্ত করছে।”এদিকে, সিনেটররা শাটডাউন নিরসনে সপ্তাহান্তেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখনো পর্যন্ত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে কোনো সমঝোতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি, ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থা ও বিমান চলাচল সংকট আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
IPCS News : Dhaka :

