রবিবার ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

যশোরে আওয়ামী লীগ সভাপতির একশ বিঘার ‘দখল ফার্ম’: কৃষকদের কান্না, খাসজমিও ছাড়েননি মিলন

আপডেটঃ ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ | অক্টোবর ২৬, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

যশোর সদরের কাশিমপুর ইউনিয়নের রাহেলাপুর গ্রামে প্রায় একশ বিঘা জমি দখল করে বিশাল কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, তাদের ফসলি জমি জোর করে দখল, প্রতারণা ও খাসজমি ভরাটের মাধ্যমে তিনি এই ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকি সরকার মালিকানাধীন দুটি বিল কালীদার বিল ও বৌদার বিল এর বড় অংশও তার দখলে গেছে।স্থানীয়রা জানান, মায়ের সম্পত্তি থেকে পাওয়া ১১ বিঘা জমিকে কেন্দ্র করে মিলনের দখল অভিযান শুরু হয়। পরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ধীরে ধীরে শতাধিক কৃষকের জমি নিজের দখলে নেন। কেউ কেউ অল্প দামে জমি বিক্রি করলেও, অনেকে টাকাও পাননি। আবার অনেকের জমি ‘অদলবদলের প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাশিমপুরের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, “চেয়ারম্যান থাকাকালে আমার ২৬ শতক জমি অদলবদলের কথা বলে নিয়ে নেন মিলন। তিন মাসের মধ্যে জমি লিখে দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর দেননি। পরে বছরে দুইবার ধান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই পাইনি।”এমন অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন স্থানীয় কৃষক, যাদের জমি এখন মিলনের ফার্মের ভেতর পড়ে গেছে। ওই ফার্মে বর্তমানে ৭০-৭৫ বিঘা জমিতে মাছ চাষ, গরুর খামার, রাইস মিল ও আমবাগান রয়েছে বলে জানান ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক আক্তারুজ্জামান।স্থানীয় সূত্র জানায়, কালীদার বিলের প্রায় ২০ কাঠা ও বৌদার বিলের ৪০ বিঘার মতো খাসজমি ভরাট করে মিলন নিজের দখলে নিয়েছেন। ফার্মের ভেতরে রয়েছে প্রায় ১০টি বড় পুকুর, যেখান থেকে নিয়মিত মাছ তোলা হয়।যশোর জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “দলের ভেতরেই সবাই জানে, যশোরে দুর্নীতি ও দখলবাজিতে মিলনের নাম প্রথম সারিতে। চেয়ারম্যান থাকাকালে সরকারি নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার, শিক্ষক নিয়োগ ও মনোনয়ন বাণিজ্য করে শতকোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি।”

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে চলে যান মিলন ও তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সামির ইসলাম পিয়াস। পরে ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর রাজধানীর গুলিস্তান থেকে মিলনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চাঁদাবাজি, হামলা ও সরকারি সম্পদ লুটসহ একাধিক মামলায় বর্তমানে তিনি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।দলের নেতৃত্বেও মিলনের পরিবার প্রভাবশালী। তার শ্যালক এসএম হুমায়ুন কবীর কবু জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, ভায়রা ভাই শেখ আতিকুর রহমান বাবু শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং ছেলে সামির ইসলাম পিয়াস সদস্য পদে রয়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, এখন মিলনের দখলকৃত জমির মালিকরা ধীরে ধীরে মুখ খুলছেন। কেউ কেউ আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তবে এতদিনে ফার্মের সীমানা এতটাই প্রসারিত হয়েছে যে, কার জমি কোথায় ছিল তা শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

IPCS News : Dhaka :