বশিকরণের প্রতারণার ফাঁদে নারীর হচ্ছে অঙ্গহানি, হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ
আপডেটঃ ৪:০০ অপরাহ্ণ | আগস্ট ০৩, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- অবাধ্য স্বামী বা প্রেমিককে বশিকরণ করতে গিয়ে প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে রাজশাহী অঞ্চলের নারীরা ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।পটাশ আর চিনির মিশ্রণে আগুন ধরে গিয়ে পুড়ে যাচ্ছে হাতের তালুসহ আঙ্গুল।আর তখনোই প্রতারকরা জ্বিনের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে অসহায় নারীদের নিকট থেকে আদায় করছে হাজার হাজার টাকা।
তাদের চাহিদাকৃত টাকা নেওয়ার পর পরই হাত পুড়ে যাওয়া নারীর নম্বর ব্লক করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে প্রতারক।এর পর উপায়ন্তর না পেয়ে এমন ভয়াবহ প্রতারণার শিকার ওই নারীরা ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতালে।কিন্তু কি কারণে ঘটছে এমন ঘটনা সেটি পরিবারের সদস্যদের কাছেও বলতে পারছেন না সংসার ভাঙ্গা বা আরও নির্যযাতনের ভয়ে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এখানে চিকিৎসা করার পরেও কোনো কোনো নারীর হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত কাটা পড়ে পঙ্গু হতে বসছেন।গত দেড় মাসের ব্যবধানে রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬ জন নারী ভয়াবহ এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।তাঁদের সবাই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর মধ্যে দুজন শিক্ষার্থীও রয়েছেন।তাঁদের মধ্যে একজন সদ্য এসএসসি পাশ শিক্ষার্থীও রয়েছে।ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।তিনি গত ২৪ জুলাই এমন প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন।পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।তার পরেও তাঁর ডান হাতের চারটি আঙ্গুলের ওপরের অংশ পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে তাঁকে ছুটি দেওয়া হলেও এখনো চিকিৎসা চলছে তাঁর।
আরও কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে দরকার হবে প্লাস্টিক সার্জারির।তার পরেও ওই চারটি আঙ্গুলের ওপরের অংশ আর ফিরে পাবেন তিনি।ফলে কিছুটা পঙ্গুত্ব বরণ করতেই হচ্ছে তাঁকে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষার্থী বলছিলেন, তাঁর সঙ্গে এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।কিন্তু ওই যুবকের পরিবার বিষয়টি মেনে নিচ্ছে না।আবার যুবকটি পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে বিয়েও করবে না ওই শিক্ষার্থীকে।
এ নিয়ে বিচলিত ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকের মাধ্যমে প্রিয়জনকে বশিকরণের একটি নম্বর পান।এরপর তিনি ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে তাঁকে হোয়াটনঅ্যাপ বা ইমোতে যোগাযোগ ফোন করতে বলা হয়।এরপর ওই শিক্ষার্থী ইমোতে বশিকরণকারী কবিরাজের ওই নম্বরে ফোন করেন।তখন অপরপ্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীকে বলা হয়, কাজ হবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে।
এর জন্য কিছু পটাশ, চিনি মম বাতি বাজার থেকে কিনে আনতে হবে।আর কাজ হওয়ার পরে টাকা দিতে হবে ওই কবিরাজকে।সেই অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থী বাজার থেকে সেগুলো কিনে এনে আবার কবিরাজকে ইমোতে ফোন করেন।তখন শিক্ষার্থীকে ভিডিও কলে ফোন করে বলা হয়, চিনি আর পটাশ হাতে নিয়ে একটি দোয়া পড়তে।
কবিরাজের কথামতো ওই শিক্ষার্থী পটাশ আর চিনি দুই হাতে নিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ করতেই বিকট সাউন্ড হয়ে আগুন ধরে হাত পুড়ে যায়।এসময় জ্বালা-যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা ওই শিক্ষার্থীকে ভিডিও কলেই ওই প্রতারক বলতে থাকে, জিন তিন মণ মিস্টি খাবে।এই মিস্টি না খেতে পাওয়ায় তোর হাত জ¦লছে।পুড়ে যাচ্ছে।দ্রুত ২১ হাজার টাকা বিকাশ কর।না হলে তুই মারা যাবি।
তোর প্রেমিক মারা যাবে, মাথার চুল পড়ে যাবে।এরই মধ্যে শিক্ষার্থীর চিৎকারে তার মা এসে হাজির হয়।উপায়ন্তর না পেয়ে ওই শিক্ষার্থীর মা দ্রুত প্রতারক কবিরাজকে (০১৩২১৫৫৭৭১৩) মোবাইল নম্বরে ২১ হাজার টাকা বিকাশ করেন।এর পর আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয় এক মণ মিস্টির জন্য।ওই টাকা পেলে ১০ মিনিটের মধ্যে হাত ভালো হয়ে যাবে বলে জানায় প্রতারক।
তার পর আবার ১০ হাজার টাকা নিয়ে ওই ছাত্রীর ফোন কেটে দিয়ে নম্বর ব্লক করে দেওয়া হয়।রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের ইনচার্জ আফরোজা নাজনীন আশা বলেন, ‘ঠিক একই কায়দায় আরও ৫ জন নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে এই চক্রটি। তাদেরও ডান হাতের তালু থেকে আঙ্গুল পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।
কারও কারও আঙ্গুলের কিছু কিছু এতোটায় পুড়ে গেছে যে, এদের সারাজীবনই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে।আর ওই হাত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে না।এর মধ্যে একজন নার্সও ছিল।ওই চিকিৎসক আরও বলেন, পটাশ আর চিনি একসঙ্গে মেশালে আগুনে পরিণত হয়।এটি অনেকেই জানে না।আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে হাত পুড়িয়ে দিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে প্রতারকচক্রটি।
সম্ভবত এ চক্রটি রাজশাহী বা আশে-পাশের অঞ্চলেরই হবে।কারণ যে ৬ জন রোগী এমন ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়েছে, তাদের ৫জনই রাজশাহী জেলার।আর একজন চাঁপাইনাববগঞ্জ জেলার।এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।তবে প্রতারণার শিকার নারীরা পরে আর লোকলজ্জা এবং পরিবারের সদস্যদের ভয়ে বিষয়টি নিয়ে কোথাও অভিযোগ করছে না।
এমনকি হাসপাতালে আসার পরেও তারা বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করছে।তবে একের পর এক এমন ঘটনার শিকার নারীরা আসতে থাকায় আমরা বিষয়টি ধরে ফেলছি।অন্যদিকে, প্রতারণার শিকার হওয়া ওই শিক্ষার্থীর নিকট মোবাইল ফোন নম্বর (০১৩২১৫৫৭৭১৩) নিয়ে ফোন করা হলে প্রতারক নিজেকে কবিরাজ পরিচয় দেয়।এর পর এই প্রতিবেদককেও ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতে বলে ফোন কেটে দেয়।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।