বর্তমান পদ্ধতিতে সংসদে ঢুকতে পারছে না, তাই পিআরের পথে ছোট দল
আপডেটঃ ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | জুলাই ০৩, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা, সংক্ষেপে পিআর পদ্ধতি।এই পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে সরব হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশের বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থায় এই দুটি দল জাতীয়ভাবে একটি পরিমাণ ভোট পেয়ে থাকলেও সংসদে তার কোনো বাস্তব প্রতিফলন ঘটে না।ফলে তারা চাইছে একটি এমন নির্বাচন ব্যবস্থা, যেখানে ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন নির্ধারিত হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে প্রথমে আসা, প্রথমে জয় (First-Past-The-Post বা FPTP) নির্বাচন পদ্ধতি।এই ব্যবস্থায় প্রতিটি নির্বাচনী আসনে একজন প্রার্থী জয়ী হন, যিনি সর্বোচ্চ ভোট পান।এতে করে বহুক্ষেত্রে এমন হতে দেখা যায় যে, কোন দল বা প্রার্থী ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়ে যান, যদিও ৬৫ শতাংশ ভোট অন্যদের পক্ষে থাকে।এই পদ্ধতির সুবিধাভোগী হয়ে থাকে বড় ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো।পক্ষান্তরে, ছোট ও মাঝারি দলগুলো, যাদের ভোট সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও কোন নির্দিষ্ট আসনে কেন্দ্রীভূত নয়, তারা খুব কমই আসন পায়।আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে ভোট গণনার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা।যদি কোনো দল জাতীয়ভাবে ১০ শতাংশ ভোট পায়, তাহলে সংসদের মোট আসনের ১০ শতাংশ সেই দলের অনুকূলে বরাদ্দ হবে।এই পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলো, যাদের জাতীয় পর্যায়ে কিছু ভোট রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে আসন জেতা সম্ভব হয় না, তারা বাস্তবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবে।এই কারণেই এই দুই দল এবং আরও কিছু ছোট রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে জোরালো দাবি তুলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পিআর পদ্ধতি চালু হলে দেশের রাজনীতিতে অধিক বহুমাত্রিকতা আসবে।সংসদে নানা মত ও চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব সম্ভব হবে। তবে এই পদ্ধতির একটি চ্যালেঞ্জও রয়েছে সরকার গঠন জটিল হয়ে উঠতে পারে, কারণ কোন একক দল খুব সহজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।ফলে জোট সরকার, রাজনৈতিক দরকষাকষি ও আপসের প্রবণতা বাড়বে, যা একদিকে গণতান্ত্রিক পরিপক্বতার দিক থেকে ইতিবাচক হলেও প্রশাসনিক কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে।বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হবে, যা বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়।এ কারণে বাস্তবিকভাবে পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, রাজনৈতিক পরিসরে এর আলোচনা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলোর জন্য এটি এখন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবিতে পরিণত হয়েছে।
তাদের দাবি অনুযায়ী, জাতীয় ভোটে যদি জনগণ তাদের ভোট দেয়, তবে সংসদে তার প্রতিফলন থাকা উচিত।এ ছাড়া এ পদ্ধতি গণতন্ত্রকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক করে তুলবে বলেও তারা মত প্রকাশ করছে।তবে সমালোচকরা বলছেন, এই দাবি আসলে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার কৌশল মাত্র, কারণ তারা জানে যে বর্তমান ব্যবস্থায় তাদের পক্ষে সংসদে জায়গা করে নেওয়া প্রায় অসম্ভব।রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচন ব্যবস্থার আধুনিকায়নের প্রশ্নে এই বিতর্ক নতুন নয়, তবে এখন এটি নতুন গতি পেয়েছে। পিআর পদ্ধতির বাস্তবতা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা আরও দীর্ঘ হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
IPCS News : Dhaka :