বৃহস্পতিবার ১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

দিনাজপুরে পাঁপড়-এর মিষ্টি স্বাদের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শ্রমিকদের তেঁতো-গল্প

আপডেটঃ ১২:৩১ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ০৫, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

দিনাজপুর:- দিনাজপুরে ৬০০ বছরেরও বেশি পুরোনো তার মুগের পাঁপড় শিল্পের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাওয়ার যোগ্য।এই গোলাকার, হলুদ পাঁপড় একসময় রাজপরিবারের খাদ্যতালিকায় ছিল, ২০১১ সালে তা ইংল্যান্ডেও রপ্তানি হয়েছিল।বর্তমানে এটি দেশের আপ্যায়ন থেকে শুরু করে স্ট্রিট ফুড পর্যন্ত সর্বস্তরে সমান জনপ্রিয়।এই বিশাল চাহিদা এবং ঐতিহ্যের কান্ডারী হলেন মূলত: নিরক্ষর, আটপৌরে গ্রাম্য নারীরা, যারা সংসার সামলে নিপুণ হাতে গড়ে তোলেন এই সুস্বাদু খাবারটি।

দিনাজপুরের চকবাজার, বাসুনিয়াপট্টি, রাজবাটী, বড়বন্দর সহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে পাঁপড়পল্লী, যেখানে বর্তমানে প্রায় ২৫-৩০ হাজার শ্রমিক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত।তৈরির কাঁচামাল মুগ, খেসারি, বেসন, সয়াবিন ও কালোজিরা দিয়ে তৈরি এই পাঁপড়ের প্রতিটি ধাপে শ্রম দেন গেরস্ত ঘরের গিন্নীরা।তবে দুঃখজনক সত্য হলো, এত বড় একটি শিল্পের জন্মদাতাদের জীবনে আজও নেমে আসেনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

কারিগররা বলছেন, প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পাঁপড় তৈরির কাজ করছি।আগে ১০০ পাঁপড় ডললে ১০ টাকা দিতো, এখন ২৫ টাকা দেয়।তবু দিন চলে না।বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে পাঁপড়ের দাম বাড়লেও বাড়েনি এই শিল্পীদের জীবনের দাম।পাপড় ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া জানান, শুধু চকবাজারেই জেলার সবচেয়ে বেশি পাঁপড় তৈরি হয়, এবং ৩০ জনের মতো ব্যবসায়ী সারা দেশে পাঁপড় সরবরাহ করেন।

এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, সরকারি সহযোগিতা বা পৃষ্ঠপোষকতার হদিস মেলেনি আজও।বিদেশে রপ্তানির চেষ্টা করা হলেও শুধু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেই তা সফল হয়নি।স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এত বড় একটি শিল্প যা হাজার হাজার নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে এবং দেশের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে, তাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।

আমরা চাই, এই ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার শিল্পকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করা হোক।দিনাজপুরের পাঁপড় শিল্পে জড়িত প্রতিটি শ্রমিকের জীবনের ম‚ল্য যেন ন্যায্য মজুরি ও রাষ্ট্রীয় সম্মানের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়।এই শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার মাধ্যমেই শুরু হতে পারে দিনাজপুরের এক নতুন শিল্পসমৃদ্ধির অধ্যায়।

IPCS News : Dhaka : আব্দুস সালাম, দিনাজপুর।