তামাকমুক্ত প্রজন্মের পথে মালদ্বীপ, ২০০৬ সালের পর জন্ম সবাই ধূমপান থেকে নিষিদ্ধ
আপডেটঃ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ০৮, ২০২৫
নিউজ ডেস্কঃ
দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে শুরু হয়েছে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার নতুন যুগ। চলতি মাসে দেশটি কার্যকর করেছে এক যুগান্তকারী তামাকবিরোধী আইন, যার মাধ্যমে ২০০৬ সালের পর জন্ম নেওয়া যে কেউ আজীবনের জন্য তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার, ক্রয় বা বিক্রয় থেকে নিষিদ্ধ থাকবেন।সরকার বলছে, এই আইন শুধু একটি প্রজন্ম নয়—পুরো দেশকে ধীরে ধীরে ধূমপানমুক্ত সমাজে রূপান্তরিত করার বড় পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে মালদ্বীপ বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর কাতারে দাঁড়িয়েছে যারা “তামাকমুক্ত প্রজন্ম” গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
নতুন আইনের অধীনে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা এর পর জন্মগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তি মালদ্বীপে তামাকজাত দ্রব্য কিনতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। বিষয়টি কেবল মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য নয়, বরং দেশটিতে আগত বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। পর্যটননির্ভর এই দ্বীপরাষ্ট্রে আইনটি যেন সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন বিশেষ নজরদারি চালাবে।আইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশের সব দোকান ও বিক্রেতাদের এখন থেকে ক্রেতার বয়স ও জন্মতারিখ যাচাই করে তামাক বিক্রি করতে হবে। নিয়ম অমান্য করলে তাদের কঠোর শাস্তি ও জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
মালদ্বীপ সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “২০০৬ সালের পর জন্ম নেওয়া কেউ কখনোই আইনত তামাকজাত দ্রব্যের নাগাল পাবে না। এভাবে ধীরে ধীরে ধূমপানমুক্ত সমাজ গঠনের পথ তৈরি হবে।”দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই আইন কার্যকর হলে আগামী কয়েক দশকে ধূমপানজনিত রোগ ও মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। সরকার একইসঙ্গে তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ই-সিগারেট ও ভেপিং ডিভাইস ব্যবহারের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
নতুন আইন অনুসারে, ই-সিগারেট বা ভেপ বিক্রির ক্ষেত্রেও একই বয়সসীমা ও যাচাই প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হবে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এসব ডিভাইসের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও নিকোটিন আসক্তি প্রতিরোধই সরকারের মূল লক্ষ্য।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালদ্বীপের এই পদক্ষেপ শুধু একটি জাতীয় নীতি নয়—এটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের জন্য অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হতে পারে। তারা মনে করেন, এমন নীতি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে অনেক দেশই একই পথে হাঁটতে উৎসাহিত হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দীর্ঘদিন ধরে ‘তামাকমুক্ত প্রজন্ম’ ধারণাকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। মালদ্বীপের নতুন আইন সেই ধারণাকে বাস্তব রূপ দিয়েছে।সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি দেশজুড়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে এতে যুক্ত করা হবে, যাতে তরুণরা ছোটবেলা থেকেই বুঝতে পারে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব এবং এর সামাজিক প্রভাব কতটা ভয়াবহ।
বিশ্লেষকদের মতে, মালদ্বীপের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করবে, তেমনি পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির দেশটিতে একটি স্বাস্থ্যবান সমাজ গঠনের দৃষ্টান্তও তৈরি করবে।
IPCS News : Dhaka :

