শনিবার ২রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

টানা কম্পন বঙ্গোপসাগরে, একে একে চার ভূমিকম্পে কাঁপল সমুদ্রতল

আপডেটঃ ১২:৪০ অপরাহ্ণ | জুলাই ৩০, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

আজ বুধবার সকাল থেকে বঙ্গোপসাগরে একে একে চারটি ভূমিকম্প হয়েছে, যা দেড় ঘণ্টার মধ্যেই সংঘটিত হয়।এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩.৮ থেকে ৫.৩ এর মধ্যে।ভূমিকম্পগুলো গভীর সমুদ্রের নিচে হলেও, ভারতের উপকূলীয় অঞ্চল ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু জায়গায় হালকা কাঁপুনি অনুভূত হয়।ভূমিকম্পগুলো যতটা তীব্র না হোক, এই কম সময়ের ব্যবধানে একাধিক ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ভারতের ভূকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (NCS) জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পটি অনুভূত হয় স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে, যার মাত্রা ছিল ৫.৩ এবং এটি সাগরের প্রায় ৯০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়।এরপর সকাল ৯টা ১৫ মিনিট, ৯টা ৩৮ মিনিট এবং ১০টা ১২ মিনিটে আরও তিনটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়, যেগুলোর মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৪.৫, ৪.০ এবং ৩.৮।এই চারটি ভূমিকম্পই বঙ্গোপসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে।ভারতের আবহাওয়া ও ভূমিকম্প বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এসব ভূমিকম্প “সিসমিক ক্লাস্টার” এর উদাহরণ হতে পারে।অর্থাৎ, একটি ভূমিকম্পের পর টেকটোনিক চাপের কারণে আশপাশের একই অঞ্চল আবার কাঁপে।এর ফলে কিছু সময়ের জন্য ঐ অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেড়ে যায়।যদিও এই ভূমিকম্পগুলো গভীর সাগরে হয়েছে এবং স্থলভাগে বড় ধরনের কাঁপুনি হয়নি, তবুও বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

ওড়িশার পুরী এবং পশ্চিমবঙ্গের দীঘা এলাকাতে অনেকে জানিয়েছেন, তারা হালকা কাঁপুনি অনুভব করেছেন।কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন।তবে কোথাও কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং জনগণকে সচেতন থাকতে বলেছে, যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সুনামি বা বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়নি।ভূকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগর এলাকা ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে একটি সক্রিয় অঞ্চল হলেও অতীতে এখানে একসাথে এতগুলো কম্পন বিরল ঘটনা।এসব ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মূলত অ্যান্ডামান ও নিকোবর টেকটোনিক প্লেট সংলগ্ন অঞ্চল, যেখানে ভারতীয় ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে। এই অঞ্চল পূর্বেও মাঝেমধ্যে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা পেয়েছে।

এই ঘটনায় জনগণের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভূমিকম্পের খবর শেয়ার করছেন।যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবুও হঠাৎ করে পরপর চারটি ভূমিকম্প হওয়ায় এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে হবে।বঙ্গোপসাগর ঘিরে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্প বা সুনামির সম্ভাবনা কতটুকু রয়েছে, তা এখনই বলা কঠিন।তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রের গভীরে কম্পনের এই ধারা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা মাত্রা বাড়ে, তাহলে আরও সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া দপ্তর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জনগণকে গুজবে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের অপেক্ষা করতে বলেছে।অতীতে ২০০৪ সালের সুনামির মতো ভয়াবহ ঘটনা এই একই অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল।তাই ভূমিকম্প ও সাগরের আচরণকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, ভূমিকম্পগুলোর পুনরাবৃত্তি এবং সংযুক্ত প্লেট গতিবিধির ওপর নজর রাখছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভূকম্প কেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণ সংস্থা।বর্তমানে ভারত সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ভূমিকম্পগুলোর বিস্তারিত বিশ্লেষণে কাজ করছে।

IPCS News : Dhaka :