গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা: ষড়যন্ত্র নাকি বাস্তব সমস্যা?
আপডেটঃ ১২:১১ অপরাহ্ণ | মার্চ ০৮, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে।একটি সমস্যার সমাধান শেষ না হতেই আরেকটি সামনে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব দাবির মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে, যার ফলে কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।একই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে খুন,ছিনতাই ও চলন্ত যানবাহনে নারীদের ওপর নির্যাতনের মতো অপরাধ।এসব ঘটনার পেছনে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন বক্তব্য ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে হরতাল, মশাল মিছিল, লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে, যা ভাইরাল করে দেশব্যাপী অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, এই অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সাবেক বেশ কয়েকজন প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তাও।নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাত মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে।এই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ইস্যু করে শ্রমিকদের উত্তেজিত করা হচ্ছে।একটি সংঘবদ্ধ দল ‘ভায়োলেন্স ক্রিয়েটার গ্রুপ’ নামে পরিচিত, যারা অর্থের বিনিময়ে অবরোধ, মিছিল ও সহিংসতা সংগঠিত করছে।শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে কাজের গতি ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রও চলছে।এ বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যায়। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও বার্তায় এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়।এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ঘোষণা দেন।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের হাতে প্রচুর অর্থ রয়েছে, যা দিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এসব কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও আমলারা দেশকে অস্থির করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।ইতিমধ্যে বেশ কিছু আমলার নাম চিহ্নিত করা হয়েছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশকে রক্ষায় ‘ডেভিল হান্ট অপারেশন’সহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রথম ষড়যন্ত্র শুরু হয়।বিদ্রোহ করেন কিছু পুলিশ সদস্য, যার পেছনে ছিলেন আওয়ামী আমলের উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তারা।এরপর আনসার বাহিনীর কিছু সদস্যও আন্দোলনে নামে।ছাত্রলীগ কর্মীদেরও এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছেন।ম্যাটস শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পাঠ্যবই সংশোধন নিয়ে স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির বিক্ষোভ, এইচএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে অস্থিরতা, সিএনজি অটোরিকশা চালকদের দাবি আদায়ে আন্দোলনসহ নানা ইস্যুতে দেশজুড়ে একের পর এক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে।
গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের ফলে নতুন সরকারের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসে ১১৯টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।বিভিন্ন শিল্প এলাকায় ঘটেছে এক হাজারেরও বেশি অপ্রীতিকর ঘটনা।এসব ঘটনার নেপথ্যে বেক্সিমকো গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে বলে জানা গেছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও বিভিন্ন মহল এখনো অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।
IPCS News : Dhaka :