সোমবার ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

গরু মহিষের গাড়ি দেখতে জাদুঘরে যেতে হবে আগামী প্রজন্মকে

আপডেটঃ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | মার্চ ১২, ২০২২

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী ব্যুরো :- আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ি।একসময় গরু বা মহিষের গাড়িতে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠানে সকল শ্রেণির মানুষ যাতায়াত করতেন।হঠাৎ প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায় অন্য রূপে দেখা মিলল মহিষের গাড়ি।এতে দেখা যায় কিছু যুবক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গান-বাজনা ও আনন্দ উল্লাস করে মহিষের গাড়িতে করে যাচ্ছে।তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় হঠাৎ করে আপনাদের এমন ভ্রমণের উদ্দেশ্য কি তারা বলেন, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া মহিষের গাড়ি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার আর সহজলভ্যতায় হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য আমাদের এই আয়োজন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু পাঠ্য বই পড়ে জানতে পারবে বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল।

৮০-৯০ দশকে গরু বা মহিষের গাড়ির প্রচলন থাকলেও বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ এখন মহিষের গাড়ি রেখে ট্রেন, বাস, আর ট্রাকের সাথে উন্নততর জীবন পরিচালনা করছেন।মহিষের গাড়িতে যেখানে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতে দিন পেরিয়ে যেত। সেখানে এখন আধুনিক পরিবহন ব্যবহারে সময় লাগে মাত্র কয়েক ঘণ্টা।

কৃষি কাজে এখন আধুনিকতা এসে গেছে চাষাবাদ হচ্ছে আধুনিক ইন্জিল চালিত যন্ত্রপাতি দিয়ে।এখন যে দুই একটি মহিষের গাড়ি দেখা যায় তা মানুষ সকের বসে ব্যবহার করছে।এ কারণে মহিষের গাড়ি তেমন আর দেখা যায় না।ঐতিহ্যবাহী ভ্রমণের আয়োজন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার ১ নং কসবা ইউনিয়নের ২ ওয়ার্ডের চন্দনা গ্রামের যুবকেরা।

মহিষের গাড়ির প্রচলন আদিকাল থেকেই।গরুর গাড়িতে বিয়ে, বরযাত্রী, মালামাল পরিবহন, নাইয়রি আনা নেয়া ইত্যাদি এক সময় হতো খুব জাকজমকের মধ্য দিয়ে।এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় শোভা পেতো এই দু’ চাকার গাড়িটি।এক সময় বৃহত্তর রাজশাহীর যে কোন গ্রামে অবশ্যই চোখে পড়তো গরু কিংবা মহিষের গাড়ি।সেই দৃশ্য খুব একটা এখন চোখে পড়ে না।

প্রত্নতাত্বিক গবেষণা গ্রন্থ ও বাংলা বিশ্বকোষ সূত্রে জানা গেছে, ব্রোঞ্জ যুগের পূর্বে গোলার্ধে কুমারের চাকা এবং গাড়ির শঠিন কাষ্ঠ নির্মিত চাকাটির মতো চাকা সর্বপ্রথম মানুষ ব্যবহার শুরু করে।মিশরীয় ব্যাবিলন এবং ভারতের সভ্যতায় চাকাওয়ালা গাড়ি ছিল।এ থেকে ধারণা করা যায় চাকার প্রাথমিক আবিস্কার ৬ হাজার বছর আগে।

৬ হাজার বছর আগে কাঠ, পাথর, মালপত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া হতো ঢালু পথে গোলাকৃতি কাঠের গুঁড়ির ওপর দিয়ে।এই কাঠের গুঁড়ি থেকে মানুষের মাথায় চাকার ধারণা আসে।একটি বসবার জায়গা তৈরি করে তার দুদিকে দুটো চাকা জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয় গাড়ির প্রচলন।এক সময় গাড়ি টানার জন্য ব্যবহৃত হতো গরু, মহিষ, ঘোড়া, কুকুর ও মানুষ।

এ সময় গরুর গাড়ির চাকায় লৌহ আবরন ছিল না কেবল কাঠ দ্বারা নির্মিত হতো।দ্রারিড় যুগে যখন এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে তখন থেকে লোহার ব্যবহার চালু হয়।১৬৪৬ সালে বাই সাইকেলের আবিস্কার, ১৮২৬ সালে রেল ইঞ্জিন আবিস্কার, এর পরে মটর গাড়ি বাস, ট্রাক, মটর সাইকেল শ্যালো চালিত যান ইত্যাদি আবিস্কার হলে পুরনো যানবাহনের যায়গা দখল করে নেয়।

কিছুদিন আগেও এ অঞ্চলে গরুর গাড়ির ক্যাচ ক্যাচ শব্দে মুখরিত ছিল চার পাশ।গরুর খুড়ার ধুলি গৃহস্থলের হাক ডাক ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।চাকা তৈরি কারিগর মিজান শেখ জানান, আগে হাটে চাকার চাহিদা অনেক ছিল।বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকা কিনতে আসত।কিন্তু একযুগ ধরে এই চাকার চাহিদা কমে যায়।

এখন যান্ত্রিক যুগের কারনে গরুর গাড়ির চাকা বিক্রি হয় না।মিজান শেখ এখন দিন মজুরির কাজ করে।গরু মহিষের গাড়ি এখন আবহমান গ্রাম বাংলা থেকে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে।গরু মহিষের গাড়ি দেখানোর জন্য আগামী প্রজন্মকে জাদুঘরে যেতে হতে পারে।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজদ।রাজশাহী।