আওয়ামী সরকারের সময়কালে লুকানো ঋণ জালিয়াতি এখন প্রকাশ্যে
আপডেটঃ ১১:২১ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ০৮, ২০২৫
নিউজ ডেস্কঃ
ব্যাংক খাতে অস্থিরতা বেড়েই চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসন শেষে দেশের ব্যাংক খাত এখন গভীর সংকটে পড়েছে। দীর্ঘদিনের অনিয়ম, ঋণ কেলেঙ্কারি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতি ভেঙে পড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে মূলধনের ওপর।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগেও ছিল প্রায় এক লাখ ১০ হাজার কোটি। অর্থাৎ, মাত্র তিন মাসেই ঘাটতি বেড়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
নতুন করে এনআরবিসি ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক মূলধন ঘাটতির তালিকায় যোগ হয়েছে, তবে বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক ঘাটতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরেও তাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫ শতাংশ, এখন তা বেড়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এতে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে গিয়ে মূলধনে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।অর্থনীতিবিদদের মতে, গত সরকারের সময় লুকানো খেলাপি ঋণ এখন প্রকাশ্যে আসছে। ব্যাংকগুলো বছরের পর বছর কাগজে-কলমে সুষ্ঠু আর্থিক অবস্থার ভান দেখালেও বাস্তবে তা ছিল ঋণ জালিয়াতির ফাঁদে আটকে। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাত লাখ কোটি টাকারও বেশি, যা পুরো ব্যাংক ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন শেষে ব্যাংক খাতের মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) নেমে এসেছে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে, যেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ন্যূনতম ১০ শতাংশ থাকা বাধ্যতামূলক।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে রয়েছে জনতা ব্যাংক, যার ঘাটতি ১৭ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এরপর অগ্রণী ব্যাংকের ৭ হাজার ৬৯৮ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ১৭৩ কোটি এবং বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, যার ঘাটতি ৮ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এছাড়া এবি ব্যাংকের ৬ হাজার ৭৭৫ কোটি, পদ্মা ব্যাংকের ৫ হাজার ৬১৯ কোটি এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ৪ হাজার ৫১ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক সর্বাধিক ঘাটতিতে আছে—২১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। এরপর ইসলামী ব্যাংক ১৮ হাজার ৫০৪ কোটি এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১০ হাজার ৫০১ কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে।
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতির বোঝা বহন করছে কৃষি ব্যাংক, যার ঘাটতি এখন ২৯ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পুরো ব্যাংক খাতের মধ্যে এটিই সর্বাধিক ঘাটতি। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রভাব, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও দায়মুক্ত দুর্নীতির ফলেই ব্যাংক খাত এখন পঙ্গু অবস্থায় পৌঁছেছে। তারা বলছেন, দ্রুত সংস্কার না আনলে সামগ্রিক অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে।
IPCS News : Dhaka :

