আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, আতঙ্কে নগরবাসি
আপডেটঃ ১২:০২ অপরাহ্ণ | মার্চ ১১, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- দেশের অন্যতম শিক্ষা ও শান্তির নগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহী এখন অপরাধের নগরীতে পরিণত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নগরীতে আশঙ্কাজনক হারে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, জবরদখল, ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনা বেড়ে গেছে। গণপরিবহন, রিকশা যাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারী— কেউই ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে যে, ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক, আইনজীবী ও নারীরাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এখন সাধারণ মানুষই আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে।এমন পরিস্থিতির মধ্যেই রাজশাহীতে শুরু হয়েছে আসন্ন ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা। প্রতি বছর নগরীর বিপণি বিতানগুলোতে কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ নগরবাসীকে আলোকিত পথ ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।সম্প্রতি নগরীর বারেক বিল্ডিং এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে ছুরিকাহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে, যা জনমনে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।অপরদিকে, কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যও অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় সাধারণ নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
রাজশাহীর সাহেববাজার, নিউ মার্কেট, লক্ষ্মীপুর, হাসপাতাল এলাকা, সিএন্ডবি মোড়, রেলগেট, তালাইমারি ও শালবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। পথচারী, রিকশা-অটোরিকশার যাত্রী এমনকি খাবার সরবরাহকারীরাও ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না।মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় অতিষ্ঠ নগরবাসী একাধিক ছিনতাইকারীকে ধরে গণপিটুনি দিয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ছিনতাইকারীরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, পুলিশের উপস্থিতি পর্যন্ত তারা আমলে নিচ্ছে না। ফলে নাগরিকদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন হাতে তুলে নিতে হচ্ছে।
এক নারী আইনজীবী এক গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি নিজেই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছি। সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভাবাই কঠিন। ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি করলেও পুলিশ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছে না। অপরাধীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পুলিশ সদস্যদের দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার আলম মাসুদ বলেন, “আন্দোলনের সময় পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তারা নৈতিক সংকটে পড়েছে। ফলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে, আর সেই সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।”
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, “২৪ ঘণ্টা আমাদের পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। রমজানে অপরাধ দমন করতে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং মার্কেট কেন্দ্রিক আলাদা নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত অভিযানে এক মাসে শতাধিক অপরাধীকে আটক করা হয়েছে। নগরবাসীকে সাথে নিয়ে দ্রুত এই সংকট মোকাবিলা করা হবে।”
নগরবাসীর প্রত্যাশা, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজশাহীর শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।