বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

লোকবল না থাকায় দুই বছর ধরে পড়ে আছে দেড় কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্স

আপডেটঃ ৫:২৪ অপরাহ্ণ | আগস্ট ৩০, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

পূর্ন আইসিইউর সুবিধা–সংবলিত অত্যাধুনিক একটি অ্যাম্বুলেন্স দুই বছর ধরে পড়ে আছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যারেজে।শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) অ্যাম্বুলেন্সটির ভেতরে উন্নত প্রযুক্তির পালস অক্সিমিটার, ইসিজি মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প, ভ্যান্টিলেটর মেশিন, সাকার মেশিন, মনিটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৫ টাকা দামের অ্যাম্বুলেন্সটি ২০১৯ সালের ৬ মে হাসপাতালে পাঠানো হয়।এর জন্য একজন আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চিকিৎসক ও নার্স প্রয়োজন।লোকবল না থাকায় এটি চালানো যাচ্ছে না।অ্যাম্বুলেন্সটির কথা রাজশাহীর সাধারণ মানুষ তো দূরে থাক, চিকিৎসকেরাই জানেন না।স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক চিন্ময় কান্তি দাস দৈনিক সমাচারকে বলেন, আইসিইউর সুবিধা–সংবলিত অত্যাধুনিক একটি অ্যাম্বুলেন্স শুধু লোকবলের অভাবে পড়ে থাকবে, এটি মেনে নেওয়া যায় না।

এত দামি একটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রাজশাহীতে আছে, এটি চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোগীর শয্যা ছাড়াও যানটির ভেতর চিকিৎসক ও নার্সের বসার আসন রয়েছে।এগুলো যেভাবে দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই মোড়ানো অবস্থায় আছে।খুলেও দেখা হয়নি।অ্যাম্বুলেন্সটির গায়ে লেখা আছে ‘সরকারি সম্পত্তি, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

আইভেকো ব্র্যান্ডের অ্যাম্বুলেন্সটি ইতালি থেকে আমদানি করা হয়েছে।এটি সরবরাহ করেছে মেসার্স ফেরিটেক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিএমএসডি (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) অ্যাম্বুলেন্সটি ক্রয় করে হাসপাতালে সরবরাহ করেছে।এমন একটি অ্যাম্বুলেন্স সম্পর্কে জানে না রাজশাহীর সাধারণ মানুষ।

এর কথা শুনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ সফি উদ্দিন বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কোনো রোগীকে জরুরিভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়ার মতো সামর্থ্য রাজশাহীর খুব কম মানুষেরই আছে।অথচ এটি ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়েছে।এর তদন্ত হওয়া জরুরি।

কেন এই অ্যাম্বুলেন্স রাজশাহীতে দেওয়া হলো, আর কেনই–বা এটি ব্যবহার করা হয়নি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সটি চালানোর জন্য ইতিমধ্যে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালকদের দায়িত্বপ্রাপ্ত (ইনচার্জ) আশরাফুল আলীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।তিনি প্রতিদিন সকালে এসে গ্যারেজের ভেতরেই অ্যাম্বুলেন্সটি ‘স্টার্ট’ দেন।

আধা ঘণ্টা চালু রেখে আবার বন্ধ করে চলে যান।শুধু চাকার হাওয়া কমে গেলে হাওয়া দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজের বাইরে নিয়ে আসা হয়।রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, এটি কেউ দিয়েছেন অথবা কিনে এনে তাঁদের হাসপাতালে ‘পুশ’ করা হয়েছে।

এগুলো স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে সরবরাহ করা হয়নি।তিনি বলেন, এই অ্যাম্বুলেন্স কোথাও পাঠাতে হলে একজন আইসিইউ জ্ঞানসম্পন্ন চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্স সঙ্গে দিতে হবে, যাতে তাঁরা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই হাসপাতালের মতো করে রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে পারেন।

লোকবল চাওয়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরাবরই চাওয়া হচ্ছে, কিন্তু কীভাবে দেবে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ওয়ার্ডেরই তো অনুমোদন নেই।তাঁরা নিজেরা স্থানীয়ভাবে এটা চালান।

জনবল কাঠামোতে আইসিইউ না থাকার কারণে এখানে লোকবল দেওয়া হয় না।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রহণ করার পর হাসপাতালের আগের পরিচালক লোকবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন।তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, করোনাকালে করোনা রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সটির দিকে নজর দিতে পারেননি।এখন এটি নিয়ে কথা বলবেন।

IPCS News Report : Dhaka:আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।