শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

১৫ দিনেই অকেজো এমন অদ্ভুত একটি রাস্তা সন্ধান

আপডেটঃ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ | আগস্ট ১২, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

কোথাও কোথাও হাঁটু পানি, হাঁটতে গেলে কাদামাটিতে তলিয়ে যাওয়ার অবস্থা। কোনো কোনো জায়গায় বালুর স্তূপ।দুই ধারে ফসলি জমি দেখে মনে হবে ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য বালু ফেলে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে।অথচ এখানে থাকার কথা ছিল দুই স্তরের মজবুত ইটের হেয়ারিং রাস্তা।১৫ দিন আগে মাত্র ২০০ মিটার ইটের তৈরি রাস্তার জন্য ব্যয় করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।১১আগস্ট বুধবার দুপুরে সরেজমিনে রাস্তাটিতে গিয়ে কোনো ইট দেখা যায়নি।এমন অদ্ভুত একটি রাস্তার খোঁজ মিলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিশুক্ষেত্র-গোঙ্গলপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায়।সড়কটির পাশেই চলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ।অন্য রাস্তার সাথে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সংযোগ স্থাপন ও নির্মাণসমাগ্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহারের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়।গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করে রাস্তাটি নির্মাণ করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ,নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার,পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকরণ না দেওয়া,নিচে ভরাট বালু কম দেওয়া,পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখার কারণে এমন দশা।তারা বলছেন,সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও কাজে গাফেলতির কারণে ১০লাখ টাকার রাস্তার কোনো সুবিধা পাচ্ছেনা তারা। বরাদ্দ হলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি।

৮ ফিট প্রশস্ত বিশিষ্ট রাস্তাটি নামে থাকলেও কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজ করা এক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাস্তার কাজ শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত আমি পাশেই সরকারি ঘর নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছি।আমাদের কাজের এখানে রড,বালু, সিমেন্ট,ইট নিয়ে আসার জন্যই রাস্তাটি করা হয়েছে।

কয়েকদিন হলো রাস্তার কাজ শেষ হওয়া।অথচ এখন রাস্তাটি খুঁজেই পাওয়া যাবে না।তিনি আরও বলেন,নিজের চোখে দেখা কাজ এটা।নিশ্চিত করে বলতে পারি কাজ ভালো হয়নি। কারণ যারা ইঞ্জিনিয়ার তারা কী জানে না,যে রাস্তাটি কেন কি কাজে ব্যবহার করা হবে?তাহলে সেভাবে রাস্তা করতে হতো।শুনা যায়, এইটুকু রাস্তায় নাকি ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

এটা কিভাবে সম্ভব! নিচে ঠিকমতো বালু ভরাট করা হয়নি।যতটুকু দরকার,তার থেকে কম পরিমাণে বালু দিয়েই ইট বিছানো হয়েছে।রাস্তা সংলগ্ন জমিতে ধান চাষাবাদ করেন কৃষক কাউসার আলী।তিনি বলেন,টিভিতে দেখেছি,সরকারি ঘরগুলো ভেঙে পড়ছে।মনে হয়, রাস্তাও সেভাবেই তৈরি হয়েছে।কাঁচা মাটিতেই ভরাট না দিয়ে রাস্তা করার কারণে এমনটা হয়েছে।

এখানকার আবাদি মাটিগুলো একটু অন্যরকম। এখানে মাটি খুঁড়ে রাস্তা করাটা সবচেয়ে বোকামি।মাটির উপরেই বালু ভরাট করে ইটের রাস্তা করলে এমন অবস্থা হতো না।গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন মণ্ডল বলেন,আমি রাস্তা তৈরির সময়েই বলেছিলাম, আগে ইট দিয়ে রাস্তা ঘিরতে হবে।তা না হলে পাশের ফসলি জমির পানি ও বৃষ্টির পানি এসে রাস্তা নষ্ট হবে।

রাস্তা নির্মাণের পরে তাই হয়েছে।বৃষ্টির পানি এসে রাস্তা দেবে গেছে।পরে আমি নিজ খরচে রাস্তার পাশ দিয়ে পানি নামার জন্য ড্রেন নির্মাণ করেছি।গোমস্তাপুর উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী নূরুল আফসার মোহাম্মদ সুলতানুল ইমাম বলেন,পুরাতন মাটির রাস্তার ওপর পুনরায় ইটের রাস্তা নির্মাণ করলে কোনো সমস্যা হয় না।কিন্তু এক্ষেত্রে ধানের জমির উপর দিয়ে রাস্তাটি করা হয়েছে।

নরম,কাঁদা মাটিতে রাস্তা করার কারণে গাড়ি চলতে গিয়ে দেবে গেছে।সকল নিয়ম মেনে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে।এই মূহুর্তে নতুন করে রাস্তাটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান,আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাথে সংযোগ ও নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যেতেই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে।

তবে এটি এলজিইডি নির্মাণ করেছে।এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না।গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ন রেজা বলেন,কাঁদামাটি ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে রাস্তাটির এমন দশা হয়েছে।অতি জরুরি ভিক্তিতে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছিল।কিন্তু রাস্তা নির্মাণের আগে ও পরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় দেবে গেছে।

IPCS News Report : Dhaka. আবুল কালাম আজাদ ঃ রাজশাহী।