শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

করোনার প্রভাবে আমের দরপতন,চাঁ, নবাবগঞ্জে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা

আপডেটঃ ৩:১৫ অপরাহ্ণ | জুন ২৯, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ দেড় হাজার কোটি টাকার আম উৎপাদন হলেও এক হাজার কোটি টাকা আসতে পারে।করোনায় লকডাউন পরিস্থিতির কারণে বাইরের আমচাষিরা আসতে পারেনি, যার কারণে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ঘাটতি থেকেই যাবে।বলছিলেন বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিউসার মার্চেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ।তিনি আরও বলেন, সরকার যদি বাগান মালিক আর আম ব্যবসায়ীদের বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করতে পারে তাহলে লোকসানের কারণে আমচাষিদের দুঃখের শেষ থাকবে না।আম চাষে বিমুখ হবেন তারা।
আমের রাজধানী খ্যাত এ জেলাটিতে এবার সেই চিরচেনা কোলাহল নেই।হাসি আনন্দে মাতোয়ারা থাকত ব্যবসায়ীরা, কিন্তু এবার আম বাগানি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি নেই।

তাদের থেকে শুধুই হতাশার গল্প শোনা যাচ্ছে।কেউ বলছেন এ বছরের লোনের টাকা শোধ করতে পারবো না।আর কেউ বলছেন এবার আর ছেলেটার চিকিৎসা করা হলো না।আবার কেউ মাথায় হাত দিয়ে বলছেন এবার কর্মচারিদের মজুরি দিতে পারবো না।সোমবার জেলার শিবগঞ্জে কানসাটের আম বাজারে গিয়ে এমনই গল্প শোনা যায় আম বাগানি আর ব্যবসায়ীদের মুখে। শামসুজ্জামান নামের এক আম বাগানি বলেন, এবার আমের মৌসুমে বাগান পরিচর্যার জন্য এক কীটনাশকের দোকান থেকে প্রায় ৬৫ হাজার টাকার বিষ কিনেছি। এবার আমের বাজার যেভাবে চলছে, টাকা পরিশোধ করতে পারবো কিনা জানিনা। তিনি বলেন, ঋণকরে বিষ কিনেছি। বাগানের আম বিক্রি করেই, ওই টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু এবার কী হবে আমি বলতে পারছি না।

দোকানদারকে আশ্বাস দিয়ে রেখেছি।শিবগঞ্জর কালুপুর এলাকার মুনিরুল ইসলামের কেনা আছে ১২টি আমের বাগান।তিনি হতাশা নিয়ে বললেন, এবার আমের দাম না থাকার কারণে খুব হতাশায় ভূগছি।মৌসুমের প্রথম দিকে আমের যে মূল্য ছিল, সে মূল্য যদি বর্তমান বাজারে থাকতো তাহলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, আমের টাকা দিয়ে তার চিকিৎসা করাবো ভেবেছিলাম।কিন্তু এবার আমের যে দাম কী করবো? আমার ছেলেকে কথা দিয়েছিলাম।তাকে ভারতে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাবে।এখন অনিশ্চয়তায় ভূগছি।তিনি জানান, মৌসুমের প্রথম দিকে ক্ষিরশাপাত আমের মণ ছিল ২৮০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত।গুটি জাতের আমের মণ ছিল ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা। লক্ষনভোগ আমের মণ ছিল ১২৫০ থেকে ১৪০০ টাকা।কানসাটের শ্যামপুর এলাকার আব্দুল মজিদের আছে প্রায় ৮০ বিঘার আম বাগান।তিনি বলেন, আমের মৌসুমের প্রথম থেকেই আমার বাগানে নিয়মিত ১৫ জন কর্মচারী কাজ করছে।তাদের দৈনিক মজুরি ৪০০-৪৫০ টাকা।

গত বছরের আমের মৌসুমে তাদের প্রতিদিনের মজুরি সন্ধ্যা হলেই দিয়ে দিতাম।কিন্তু এবছর আমের দরের অবস্থা খারাপের কারণে তাদের সম্পূর্ণ মজুরি বুঝিয়ে দিতে পারিনি। নিজের কাছেই খারাপ লাগছে।তিনি বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মণ আম পেরে বাজারে নিয়ে আসি।যাতায়াত খরচ, কর্মচারীর মজুরি আর দুই বেলার হোটেলে খাবার খেলেই সব টাকা শেষ।তিনি জানান, বর্তমান বাজারে ফজলি আমের মণ ২০০-৪০০ টাকা, বোম্বাই আমের মণ ৪০০-৬০০ টাকা, ক্ষিরশাপাত আমের মণ ১৪০০ থেকে ২০০০ টাকা, আম্রপালি রকম ভেদে ১৫০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা, ল্যাংড়া আমের মণ রকমভেদে ১১০০-১৫০০ টাকা, লক্ষনভোগ আমের মণ ৪০০-৬০০ টাকা এবং গুটি জাতের আম ২০০-৪০০ টাকা।

আমের আড়ৎদার জাকির হোসেন বলেন, সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে আমের বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।যদি এমন চলতে থাকে তাহলে আমের বাজারে আর আম নাও নামতে পারে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন- এ বছরে জেলায় আমবাগানের পরিমাণ ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর।আম গাছের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ।গতবছরের চেয়ে এবার জেলায় ৩ হাজার ৩৬০ হেক্টর বেশি জমিতে আমের আবাদ হয়েছে।এ আমের মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল আড়াই লাখ মে.টন, তবে এবার রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রায় ৩ লাখ মে.টন আম উৎপাদন হয়েছে।

IPCS News/রির্পোট।