শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

জরুরি হলেও রাজশাহীতে আম মৌসুমের জন্য দেয়া যাচ্ছনা লকডাউন

আপডেটঃ ৩:১৩ অপরাহ্ণ | জুন ০২, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলছে বিশেষ লকডাউন। রাজশাহীসহ সীমান্তবর্তী আরও সাত জেলায় বিশেষ লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটি।পরিস্থিতি বিবেচনা করে লকডাউন দেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও।কিন্তু এখনো রাজশাহীসহ ওই সাত জেলায় লকডাউন দেয়া হয়নি।লকডাউন জারি করতে দেরি হলে সঙ্কট বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন করোনার চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।দেশে ভারত সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩০টি।এর মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা সাত জেলায়।যা অন্যতম চাঁপাইনবাবগঞ্জ।সংক্রমণ বাড়ায় এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় সেখানে বিশেষ লকডাউন চলছে।গত রোববারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে সংক্রমণের হার ৩৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, নওগাঁতে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ, সাতক্ষীরাতে ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ শতাংশ।চাঁপাইনবাবগঞ্জে সম্প্রতি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন যাদের ভারত ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে।

তবে ভারত ভ্রমণের ইতিহাস নেই এমন রোগীও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন।অর্থাৎ সীমান্তের জেলাগুলোতে ভারতীয় অতি সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্ট বি.১.৬১৭ এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে।‘ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে ‘লকডাউন’ দিতে দেরি করলে ঝুঁকি থেকেই যাবে’ সোমবার এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান, এখন যেহেতু রাজশাহীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে আম ও লিচুর মৌসুম চলছে, সে কারণে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে বলে আমার ধারণা।তিনি বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার আম ও লিচু বেচাকেনা হয়। কঠোর লকডাউন দিলে চাষিরা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ দিকটা মাথায় নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছেনৎ বলেন তিনি।এদিকে, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমন বাড়ছে জানিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, এ হাসপাতালে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে রোগী ছিল ১৩৬ জন, কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানে রোগী হয়েছেন ২১৬ জন।তিনি বলেন, সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সাতজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনই করোনা পজিটিভ।আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে দুইজন।

মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন ও নওগাঁর দুইজন, রাজশাহীর একজন ও নাটোরের একজন।এ নিয়ে গত আট দিনে রামেক হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে মোট ৬২ জন।হাসপাতাল পরিচালক শামীম ইয়াজদানী আরো জানান, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসিইউতে ২১৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।যার মধ্যে পজেটিভ রোগী ৯১ জন।আক্রান্তদের মধ্যে করোনা ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১৬ জন।তিনি জানান, ২৪ ঘন্টায় করোনা ইউনিটে ৩০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৮ জন, রাজশাহীর ১০ জন ও নাটোরের দুইজন।

এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান সাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের আট জেলায় ৩৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৯৮ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২১ জন, নওগাঁর ৬৭ জন, নাটোরের ১৭, জয়পুরহাটের ২৯, বগুড়ার ১২, সিরাজগঞ্জের ২০ ও পাবনার ১৮ জন।একই সময় মারা গেছেন ছয়জন।এদের মধ্যে নওগাঁর তিনজন, নাটোরের একজন ও বগুড়ার দুইজন।আর সুস্থ্য হয়েছেন রাজশাহীর ২৬ জন, নওগাঁর চারজন, বগুড়ার ২৪ জন ও সিরাজগঞ্জের ১১ জন।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, মানুষ যত মুভ করবে, ততই ইনফেকশন ছড়াবে।

তাই যদি আমরা ইনফেকশনকে কন্ট্রোল করতে চাই তাহলে লকডাউন কঠিন ও কঠোর করতে হবে।
এখানে ইনভেস্টমেন্ট অনেক, এর সঙ্গে জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে।চিকিৎসক হিসেবে আমরা লকডাউনের কথা বলছি; কিন্তু নীতি নির্ধারকরা জীবিকার কথাও চিন্তা করছে, কেবল জীবনের কথা নয়’, বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী।তার মতে, যদি বেশি দেরি করা হয় তাহলে কিন্তু ছড়িয়ে যেতে পারে, তাই একটা স্ট্রিক্ট লকডাউন দিলে ভালো হতো।দেশজুড়ে ইতোমধ্যেই লকডাউন চলমান জানিয়ে রাজশাহী জেলার জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, এই লকডাউনের বাইরে রাজশাহী জেলার করোনা ব্যবস্থাপনা কমিটি এখনও পর্যন্ত কোনও চিন্তা করছেন না।

তবে পরিস্থিতি যদি আরও বেশি খারাপ অবস্থায় যায় তাহলে পরবর্তীতে বিবেচনা করবো, আমরা আরও একদিন দেখবো।বুধবার হয়তো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।তিনি বলেন, একটি ছোট জেলা লকডাউন করা আর সিটি করপোরেশন বা মহানগর লকডাউন করা এক বিষয় নয়।ক্যাপাবিলিটির বিষয়টাও রয়েছে।আমি লকডাউন ডিক্লেয়ার করে দিলাম, কিন্তু এনফোর্স করতে পারলাম না, তখন সেটা নিয়েও কথা উঠবে।

আমের বিষয়টিকে একটা বড় ইস্যু আছেই মন্তব্য করে আব্দুল জলিল বলেন, ইতোমধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ব্যবসা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কৃষকের কথাও আমাদেরকে ভাবতে হবে।একজন চিকিৎসক তার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে কথা বলেন।কিন্তু যখন অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত হয় তখন অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হয়।

IPCS News/রির্পোট, আবুল কালাম আজাদ।