শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের ভয়ে চাঁপাই ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ

আপডেটঃ ৩:১৬ অপরাহ্ণ | মে ২৯, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

চাঁপাই নওয়াবগঞ্জ জেলায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়া এবং বিশেষ করে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অপমৃত্যু থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবার পরিজনকে রক্ষার জন্য স্বপরিবারে , জেলার কয়েকশত পরিবার ইতি মধ্যে জেলা ছেড়ে অন্য জেলায় অবস্থান নিয়েছে।জেলাটি লকডাউন থাকায় প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে, রাতের অন্ধকারে ও বিভিন্ন কৌশলে এলাকা ছেড়ে অন্য জেলায় চলে যাচ্ছে। ভারত সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় করোনার সংক্রমণের  হার আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি এবং এ জেলায়  ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সনাক্ত হওয়ায়  এই জেলায়  ৭ দিনের  কঠোর লকডাউন চলছে।প্রশাসনের পক্ষে হতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কেউ যেন বের বা প্রবেশ করতে না পারে সেই জন্য জেলার সকল উপজেলা  মুল সড়ক ও  লোকাল সড়কে বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক মোতায়েন রয়েছে পুলিশ প্রশাসনের লোক।

জেলার সকল মানুষকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বের হতে দিচ্ছে না পুলিশ। চলাচলে চলছে কঠোর বিধি নিষেধ।এতো কিছুর পরেও বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে সংক্রমণ ও মৃত্যু ভয়ে চাঁপাই ছেড়ে পালাচ্ছে শত শত মানুষ। এর বেশির ভাগ রাজশাহীর তানোর-গোদাগাড়ীতে-কাকনহাটসহ রাজশাহী শহরের বিভিন্ন এলাকায় থাকা আত্মস্বজনদের বাসা-বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।রাজশাহী শহরের মান্দা কলোনিতে, শিবগঞ্জের ৫ সদস্যের একটি পরিবার ২৮ মে শুক্রবার দিবাগত রাত ১০ টায় আশ্রয় নিয়েছে।তাদের আশ্রয় স্থান প্রকাশ না করার অনুরোধে ,পরিবারটির ৭৫ বয়সের বৃদ্ধা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা মৃত্যুভয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম ।আজ দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পর আবারও মৃত্যু ভয়ে নিজ বসতভিটা ছাড়লাম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্রমাগত করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের‌ চরম ঝুঁকিতে পড়েছেন রাজশাহী জেলার মানুষ।চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার সীমান্ত রেখা, গোদাগাড়ী ,তানোর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।গত ৩  দিন থেকে তানোর ও গোদাগাড়ীর পুলিশ প্রশাসন, চাঁপাই হতে যেন কোন মানুষ এ দুই উপজেলায় বা রাজশাহী শহরে প্রবেশ না পারে সেই জন্য প্রধান প্রধান সড়কে চেক পোষ্ট বসিয়েছেন। তাদের যাতায়াত ঠেকাতে রাতদিন অবস্থান করছেন সদর ও অলিগলি রাস্তায়।

লোকবল সংকটের কারণে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করছে রাজশাহী শহরে। তাদের এ জনস্রোতে ঠেককাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।তবে চাঁপাই ছেড়ে আসা ব্যাক্তিদের সরনার্থীদের সাথে তুলনো করেছেন তানোরে সিমানায় চেক পোষ্টে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন,সংক্রমণের ভয়ে বেশির ভাগ মানুষ ছোট শিশু-বৃদ্ধ ও হাড়িপাতিল পুটলা-পাটলি নিয়ে তানোর ও গোদাগাড়ীতে থাকা আত্মস্বজনদের বাসা-বাড়িতে চলে আসছেন।

তাদের কোন অজুহাত না শুণে ফেরত পাঠানো হলেও বিকল্প পথে তারা চলে যাচ্ছেন ,তাদের নির্ধারিত আশ্রয়স্থলে।সরেজমিন ২৯  শনিবার সকাল হতে চাঁপাই সদর উপজেলার আমনুরা ধামধুম গিয়ে দেখা গেছে সেখানের সড়কের ব্রিজের উপরে দিয়ে বাশ দিয়ে ব্যারিকেট দিয়েছেন পুলিশ।সেখানের মুন্ডুমালা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ চেক পোষ্ট বসিয়েছেন। সকাল সাড়ে ৮ থেকে বেলা দুইটো পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক ব্যাক্তি সরনার্থীরমত পুটলা-পাটলি বেধে শিবগঞ্জ-কানসাট হতে তানোরের বিভিন্ন গ্রামে আসার জন্য ভিড় করছেন চেক পোষ্টে।

কিন্ত কোন অজুহাত না শুনে পুলিশ তাদের ঢুকতে দেইনি। তবে তারা ফিরেও যাইনি। তারা পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে চেক পোষ্ট থেকে ফিরে মাঠে মধ্যে দিয়ে পায়ে হেটে তানোর ঢুকে পড়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।শিবগঞ্জ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে তানোরের বাধাইড় ইউনির্য় একটি গ্রামে কয়েকজন এসেছেন।না প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন,শিবগঞ্জ-কানসাটে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক মানুষ বাড়ি মারা যাচ্ছে।

তাই তারা সেখানে আর থাকতে চাইনা।সে কারণে এখানের থাকা আত্মবাড়িতে পালিয়ে এসেছেন।এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়ন মুন্ডুমালা পৌর এলাকায় গোদাগাড়ীর বিভিন্ন গ্রামে শত শত মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ তথ্য দিয়েছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকমপ্লে´ এর চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন স্বাথ্য কমপ্লে´গুলোতে আসা মানুষের করোনার উপসর্গ  কয়েকগুণ বেড়েছে।মুন্ডুমালা স্বাস্থ্য কমপ্লে´ এর সহকারী চিকিৎসক ডা: দুরুল হদা বলেন, প্রতিদিন যে সাধারণ রোগী আসে গত কয়েক দিয়ে তার চেয়ে তিন-চারগুণ রোগি তার এখানের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। যার বেশি ভাগ ছিল করোনা উপসর্গ। জ্বর,সর্দ্দিকাশি ইত্যাদি নিয়ে।মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ইনচার্জ মিজান তিনি তিন দিন যাবত তানোরের শেষ সিমানা আমনুরা ধামধুম নামক স্থানের চেক পোষ্ট বসিয়েছেন।

কথা হয় তার সাথে তিনি বলেন,এ তিন দিনে কয়েক হাজারের বেশি মানুষ চাঁপাই এর বিভিন্ন অঞ্চল হতে তানোরসহ বিভিন্ন গ্রামে আত্মিয় স্বজনদের বাড়িতে আসার জন্য সরনার্থীর মত লাইন ধরে আসতে চেয়েছে।কিন্ত পুলিশের বাধায় তারা ঢুকতে পারিনি। তবে চাপাই থেকে আসা ব্যাক্তিরা অনেকটা সংক্রমণের ভয়ে পালিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।তবে,তারা ফিরে গেছেন কিনা এমন প্রশ্ন করতে তিনি বলেন,মুল সড়ক দিয়ে তারা আসতে পারেনি। তবে অন্য কোন বিকল্প পথে পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে ঢুকেছে কিনা সেটা বলা যাবেনা।

IPCS News/রির্পোট, আবুল কালাম আজাদ।