বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

মাঠে মাঠে আলু তোলায় ব্যস্ত কৃষক কৃষাণী

আপডেটঃ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | মার্চ ১৩, ২০২১


নিউজ ডেস্কঃ

এখন ক্ষেত থেকে আলু উঠানোর ভরা মৌসুম চলছে।রাজশাহীর মাঠে মাঠে আলু তোলার হিড়িক পড়েছে।মাঠ থেকে আলু উঠানো নিয়ে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।এবারে আলুচাষে অনুকুল আবহাওয়ায় থাকলেও তিনদিন ধরে রাজশাহীর আকাশে মেঘ দেখা দেয়ায় আলু তুলতে হুড়াহুড়ি শুরু করেছে চাষিরা।গত মৌসুমে পুরো সময় ধরে আলুর দাম আকাশচুম্বী এবং অনুকুল আবহাওয়া থাকায় রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর বেশী জমিতে আলু আবাদ হয়েছে।আলুর উৎপাদন কিছুটা কম এবং লেদা পোকার আক্রমণে চাষিরা অনেকটা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।তবে সার্বিকভাবে অর্থকরি আবাদ নিয়ে সোনালী স্বপ্নের বীজ বুনছেন চাষীরা।কৃষিবিদরাও বলছেন এবারো চাষিরা লাভের মুখ দেখবেন।এবারে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬শ’ ২৯ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৩৫ হাজার ৮৭৫ হেক্টর।রাজশাহীর আলু চাষী ও কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে আলুর দাম খুবই ভাল ছিল।হিমাগারে রক্ষিত বেশীরভাগ আলু বিক্রিতে চাষিরা এযাবৎকালের লাভের মুখে দেখেন।

গত বছরের লাভের আশায় এবং লাভবান চাষি ও ব্যবসায়ীরা এবার গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে আলু আবাদ করেছেন।এখন রাজশাহীর মাঠে মাঠে যে দিকেই চোখ যাবে সেদিকেই দেখা মিলছে আলু তোলার দৃশ্য।কোন কোন দেখা যাচ্ছে গরুর লাঙ্গলের সাহায্যে ক্ষেতে ভোড় দিচ্ছে।কোন কোন জমিতে ভোড় দেয়া আলু সংগ্রহ করছে কৃষক-কৃষানীসহ তাদের ছেলে মেয়েরা।পাশাপাশি শ্রমিকরা আলু বস্তাতে সংরক্ষণ করে বিক্রি ও হিমাগারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।আবার এই বস্তা করা আলু ভুটভুটি, মিনিট্রাক(লরি) ও ট্রাকে বহন করে চলেছে।

চাষীরা বলছেন, গত ২/৩ বছর যাবত আলুর আবাদ ও উৎপাদন ভালো হচ্ছে।গত বছর তারা উঠতি মৌসুমে এবং হিমাগারের মজুত আলুর দামও পেয়েছেন ভালো।উঠতি মৌসুমে ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা বস্তা (৬০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে।প্রতি বিঘা (১ হেক্টর= প্রায় সাড়ে সাত বিঘা) জমিতে নীট খরচ বাদ দিয়ে লাভ হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।মৌসুমের উঠতি সময়ে যতই লাভ হোক না কেন-প্রান্তিক চাষি ছাড়া বেশীরভাগ আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা এ সময়ে আলু বিক্রি করেন না।আবার বেশীরভাগ বড় চাষি ও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হিমাগার থেকে ঋণ নেওয়ায় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হিমাগারে আলু রাখেন এবং রাখতে বাধ্য হোন।তবে সব মিলিয়ে এবারে আলুর উৎপাদন ভাল হওয়ায় চাষি পরিবারে আনন্দের বাতাস বইছে।

সফল আলু চাষি মৌগাছি গ্রামের নুরুল ইসলাম ও নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, অনুকূল আবহাওয়া এবং ভাল মানের বীজ দিয়ে আবাদ করায় রাজশাহীতে আলুর আবাদ ও উৎপাদন দুটোই বাড়ছে।এবার এই দুইজন প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন।আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন ভাল হয়েছে।তার এলাকার অন্যান্য চাষিদের আবাদও এবার ভাল হয়েছে এবং উৎপাদন বেশী পাচ্ছে।তারা বলেন, রাজশাহীর কোল্ড স্টোরেজ গুলোর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি আলু এখানে উৎপাদন হচ্ছে।

তাই স্টোরে জায়গা না পাওয়ায় অনেককে অন্যান্য জেলায় আলু বিক্রি করে দিতে হয়।তিনি রাজশাহীতে কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায় গতবছর রাজশাহীতে আলু আবাদ হয়েছিল ৩৫ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে।এবার আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে।আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে।লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর।রাজশাহীতে কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে ৩৬টি।এগুলোর মোট ধারণ ক্ষমতা প্রায় পৌনে ৪ লাখ মেট্রিক টন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল বলেন, অনুকুল আবহাওয়া থাকায় এবং এখন পর্যন্ত কোন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় উৎপাদন বেশী হচ্ছে।তিনি আরো বলেন এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও আলু ক্ষেতের তেমন ক্ষতি হবে না।

IPCS News/রির্পোট, আবুল কালাম আজাদ।