বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

৭ই মার্চের ভাষণ : “ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যায়ন” মোঃ সাইফুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেটঃ ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ | মার্চ ০৭, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

৭ই মার্চের ভাষণ :ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যায়ন”লেখক মোঃ সাইফুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক,হাজী ইউসূফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়,ভৈরব,কিশোরগঞ্জ।’ভাষণ’ যার সমার্থক শব্দ হলো বক্তৃতা।কেউ ইচ্ছে করলেই ভাষণ বা বক্তৃতা দিতে পারে না। আবার কেউ ভাষণ তথা বক্তৃতা দিলেও মানুষ শুনতে চায় না।কারণ জ্ঞানহীন ও অহংকারী ব্যক্তির ভাষণকে মহান আল্লাহ গাধার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।যেমন – “‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে অহংকার না করে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার কণ্ঠস্বর বিনম্র  কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট ও শ্রুতিকটু স্বর হল গাধার স্বর’ (সূরা লুকমান-১৯)।অন্যদিকে যিনি প্রকৃত জ্ঞানী ও বিনয়ী, তাঁর সাধারণ কথা থেকে শুরু করে সকল ধরনের ভাষণ বা বক্তৃতা মানুষ শুনতে চায় এবং তাঁর বক্তব্য থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে চায়।

তেমনি একজন অহংকারমুক্ত, বিনয়ী, পদলোভমুক্ত, জনদরদী, প্রকৃত দেশ প্রেমিক, ঐতিহাসিক বক্তা, দেশ ও মানুষের শান্তিকামী এবং কল্যাণকামী জননেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।যাঁর ৭ই মার্চের ভাষণই একটি জলন্ত প্রমাণ।যে ভাষণ বিশ্বনেতৃবৃন্দ ও মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক শিক্ষামূলক ভাষণ।যে ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য ‘ হিসেবে ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবর ‘মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’ – এ অন্তর্ভুক্ত করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। এ ধরনের ভাষণের ব্যাপারেই রাসূল (সাঃ) বলেছেন – ” কোন কোন ভাষণ যাদুর মতো হৃদয়গ্রাহী ও আকর্ষণীয়” ( সুনানে আবু দাউদ – ৫০১১)।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বাংলার মানুষের কাছে এতো আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী হওয়ার পিছনে বাস্তবমুখী ও কিছু অনুপম কারণ ছিল।যেমন এই ভাষণে তিনি বলেছিলেন – বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর এক অনুপম ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা, মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার কথা, গরীব-দুঃখী মানুষের কষ্ট দূরীকরণের কথা (সহীহ মুসলিম – ৬৭৪৬), এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা, ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে দৃঢ় অবস্থানের কথা ( সূরা নাহল-৯০) , বাঙালী জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের কথা।যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, ” নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে”(সূরা রা’দ-১১)। এই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।তিনি বলেছিলেন -” মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিবো।এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।

এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”এমন অনুপম বিভিন্ন ন্যায়-নীতির কথা বলার কারণেই ছোট -বড়, নারী -পুরুষ, ধর্ম -বর্ণ ও  দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের কাছে এতই  হৃদয়গ্রাহী ও আকর্ষণীয় হয়েছিল, যার ফলে মানুষ তাঁদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়েছিল এবং দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে তাঁদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন করেছিল এই বাংলা। তাঁদের শহীদ হওয়ার বিনিময়ে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা পেয়েছি বিশ্বের বুকে আঁকা একটি স্বাধীন দেশ।যার নাম বাংলাদেশ।

সুতরাং, যাঁর ভাষণের উছিলায় এবং যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন মহান আল্লাহ পূরণ করেছেন, আমাদের উচিত তাঁদের জন্য জন্য মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করা।কারণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ” যে ব্যক্তি মানুষের  প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না ” (সুনানে আবু দাউদ -৪৮১১) এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে যেসব ইসলামী কার্যাবলী ফুটে উঠেছে সেগুলো আমাদের ব্যবহারিক জীবনে বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করা।তাই পরিশেষে বলতে চাই -” ৭ই মার্চের ভাষণ হলো একজন খাঁটি দেশপ্রেমিকের খাঁটি ভাষণ”।

IPCS News/রির্পোট, মোহাম্মদ মোস্তফা জাকির (কটিয়াদী প্রতিনিধি)।