শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

সোয়া ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে পাখিদের নিরাপদ আব্বাস ভূমির জন্য বাগান লিজ নিলেন সরকার

আপডেটঃ ৬:৩৫ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

আনন্দঘন পরিবেশ আর পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে, বদলে গেছে গ্রামটির নাম।পরিচিতি পেয়েছে পাখির গ্রাম হিসেবে।আর সেই পাখিদের পরিচয়ে সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি ইউনিয়নের নিভৃত খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের নাম।আমবাগানের সেই পাখি সুরক্ষায় বাগানের মালিক-ইজারাদারগনকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার নির্দেশক্রমে অনুমতি প্রদান করেছে সরকার।রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সুপারিশ মোতাবেক বন অধিদপ্তরের অনুন্নয়ন খাত (অর্থনৈতিক কোড ৩২১১১০৩) থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫জন মালিককে বার্ষিক ৩,১৩,০০০ (তিন লক্ষ তের হাজার) টাকা দেওয়ার নির্দেশক্রমে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের বন-২ শাখা বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা (স্বারক নম্বর ২২.০০.০০০০.০৬৭.৬১.০৪৩.১৫.১৩২) উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত (তারিখ-১-১১-২০২০) পত্রে ক্ষতিপূরণের ওই টাকা দেওয়ার নির্দেশক্রমে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।তবে যে বছর পাখি বসবেনা, সে বছর কোন ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবেনা।সেই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সেই গ্রামের আমবাগানের শামুখখোল পাখিগুলো বিগত ৩ বছর যাবত আসছে।প্রাকৃতিক কারণেই যে কোন সময় পাখিগুলো উক্ত স্থান ত্যাগ করে অন্য কোন নতুন স্থানে চলে যেতে পারে।

সেহেতু আগামী কয়েক বছর পর্যবেক্ষণে রেখে এতদবিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে।সব মিলিয়ে পাখির ভালবাসা আর নিরাপত্তার স্থায়ী ‘নীড়’ পাওয়ার আনন্দে হাজারো শামুকখোল পাখির কান জুড়ানো সেই কূজন শোনা যাবে, পাখির অভয়ারণ্য রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিভৃত গ্রাম খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে।গ্রামের সেই আমবাগানে পাখির কলকাকলী আর অদ্ভুত মিতালী দেখতে পাবেন দুর দুরান্তের দর্শনার্থীরাও।জানা গেছে,গাছের সংখ্যা ও আমের মুল্যে হিসেবে ৫জন মালিক বার্ষিক ক্ষতিপূরণের ওই ৩,১৩,০০০ টাকা পাচ্ছেন খোর্দ্দ বাউসার, মুঞ্জুরুল হক (মুকুল) সানার উদ্দীন, সাহাদত হোসেন এবং আড়ানির শফিকুল ইসলাম (মুকুট) ও মোঃ ফারুক হোসেন।

সরকারের একজন সাবেক সচিব, বাগান মালিক শফিকুল ইসলাম (মুকুট) বলেন, পাখি সুরক্ষায় এটি সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ।বাগান মালিকদের জন্য সরকারি এমন একটা প্রকল্প আশা করেছিলেন।সরকারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের টাকা দেওয়ার জন্য।প্রক্রিয়াধীন সেই টাকা এখন বিতরণের অপেক্ষায়।তবে পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় থেকে টাকা প্রদানের অনুমতি সংক্রান্ত পত্র যখন দেওয়া হয়েছে, তখন সবাই সেই টাকা পাবেন বলে জানান সাবেক এই সচিব।এদিকে মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গত ৩ বছর ধরে পাখিরা বাগানে এসেছে।তারা টাকা পাবেন ২০২০ সাল থেকে।এর আগের দুই বছরের টাকা মালিকরা যদি পায়,তাহলে ক্ষতিটা অনেক পুষিয়ে আসবে।অপরদিকে গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে জন্য পরিচর্যা করছেন নিয়মিত।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, এই পাখি প্রজননে অতীত কোন ইতিহাস না থাকলেও খোর্দ্দ বাউসা গ্রামটি খাল-বিলের পাশে হওয়ায় এখানে প্রজনন সম্ভব হচ্ছিল।কিন্তুু বাগান পরিচর্যা করতে গিয়ে কয়েকটি আমগাছের ডাল কেটে পাখির বাসা ভেঙ্গে দেন আম ব্যবসায়ী।ওই ভেঙ্গে দেওয়া বাসায় ছিল উড়তে না শেখা পাখির বাচ্চা।এতে হুমকির মুখে পড়ে হাজারো শামুকখোল পাখি।স্থানীয় পাখি প্রেমিক কিছু মানুষ বাঁধা দিলে, কয়েক দিনের সময় বেঁধে দেন আম ব্যবসায়ী।এ খবর গনমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পাখী সুরক্ষায় পাশে দাড়ায় র‌্যাব।মহাপরিচালকের নির্দেশে (৩০ অক্টোবর) র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক মাফুজুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে পাখির বাসা ভাঙ্গা যাবেনা বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বাগানটি পর্যবেক্ষন করবে বলে জানান তিনি।এর পাশাপাশি (৩০ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায় এর প্রয়োজনীয় নির্দেশনার আরজির প্রেক্ষিতে ওই এলাকা কেন অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেণ হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে আমবাগানে থাকা পাখির বাসাগুলো ভাঙা যাবে না বলে হাইকোর্ট থেকেও এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।একই সাথে অভয়ারণ্যে ঘোষনা করলে কি পরিমান ক্ষতি হবে তা জানতে চেয়ে চল্লিশ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহি অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয় হাইকোর্ট থেকে।পরে আম বাগানের ক্ষতির বিষয়ে জরিপ করে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমান নির্ধারন করে প্রতিবেদন দেন,বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউট ঈশ্বদীর মহাপরিচালক ড. মো. আমজাদ হোসেন।২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর রাজশাহী জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাখিদের বাসাভাড়ার বরাদ্দ চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল।

সোমবার (১ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন ওই গ্রামের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, পাখিদের বাসা বেঁধে আশ্রয় নেয়া ৩৮টি গাছের মধ্যে বড় একটি আমগাছ মরে যাচ্ছে।অন্যদিকে এই সময়ে বাগানে কোন পাখী দেখা যায়নি।স্থানীয়রা জানান. বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে এরা আবার চলে যায়।গত কয়েক বছর ধরে শামুকখোল পাখিরা এই বাগানে বাসা বেঁধে আছে।এই বাগানে বাচ্চা ফোটায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান, ৩৮টি আম গাছে পাখী বাসা বেঁধে ছিল।সেই গাছগুলোর আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করা হয়েছে।সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমান নির্ধারন করা হয় বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা।সেই অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, পাখির বাসা বেঁধে থাকা ৩৮টি আম গাছের মধ্যে ১টি গাছ মরে যাচ্ছে।এ খবরে সেখানে গিয়ে গাছটি বাঁচানোর জন্য পরিচর্যার নির্দেশনা দিয়েছেন।সামাজিক বন বিভাগের রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, মন্ত্রনালয়ের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে প্রধান বন সংরক্ষণ (সিসিএফ) কর্মকর্তার দপ্তর থেকে নির্দেশনা আসবে।সেই নির্দেশক্রমে অনুমতি পেলে টাকার চেক হস্তান্তর করবেন।এখনো ওই বিষয়ে কোন নির্দেশনা পাননি বলে জানান এই কমকর্তা।তবে মালিকদের পক্ষ থেকে পরস্পর বিষয়টি জানতে পেরেছেন।

স্থানীয়দের তথ্য মতে, গত চার বছর আগে পাখি আসতে দেখে প্রথম বন অধিদপ্তরে খবর দিয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম। সেই খবরে বন অধিদপ্তর থেকে বন্যপ্রাণী আটক, হত্যা, শিকার, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় দন্ডনীয় অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদন্ড এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানা উল্লেখ সহ যেকোনো তথ্যের যোগাযোগের জন্য সাইন বোর্ড এর নিচে বন্যপ্রানী বিষয়ক একটি নম্বর দেওয়া হয়।স্বেচ্ছায় পাহারা দিয়ে পাখিগুলোকে মমতায় আগলে রেখেছিলেন, রফিকুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন, বিচ্ছাদ আলী, নাসিম আঞ্জুম, সাইফুল ইসলামসহ অনেকে।

IPCS News/রির্পোট, আবুল কালাম আজাদ।