বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

হলুদ প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত রাজশাহীর কৃষকেরা

আপডেটঃ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ২৮, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় হলুদ চাষ করে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য।রাজশাহীর জেলার  উপজেলা গুলোর সমতল ও চরাঞ্চল এলাকায় এ বছর ব্যাপক হলুদের চাষাবাদ হয়েছে।হলুদকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় চাতাল।উপজেলার আড়ানীতে গড়ে উঠেছে সবেচেয়ে বেশি সংখ্যক চাতাল।এই এলাকায় গড়ে ওঠা শতাধিক চাতালে হলুদ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কাজ করছেন শত শত কৃষক-কৃষাণী।সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, পতিত ও বাড়ির আশেপাশের আবাদি জমিতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এবছর ব্যাপকভাবে হলুদ চাষ করেছেন কৃষকরা।

কৃষকদের দেয়া তথ্যমতে, বিগত বছরগুলোয় হলুদ আবাদ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন তারা।তাই পূর্বের চেয়েও বেশি জমিতে হলুদ চাষাবাদ করেছেন।শুরু হয়েছে হলুদ উত্তোলন।হলুদ সেদ্ধ, শুকানো ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।সম্প্রতি নিজ এলাকায় কয়েকটি চাতাল পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।তিনি হলুদের সম্ভাবনা নিয়ে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।হলুদ চাষ ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ব্যাপারে দিয়েছেন নানান পরামর্শ।কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হলুদ চাষে স্বল্প সময়ে কম পরিশ্রমেই বেশি লাভবান হওয়া যায়।

কীটনাশকের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না।এ কারনে অনেক কৃষকই আমবাগান ও পতিত জমিতে হলুদ চাষে ঝুঁকছেন।হলুদ চাষিরা জানান, প্রতি শতাংশ জমিতে হলুদ চাষে খরচ হয় ৬ থেকে ৭’শ টাকা।ফল পাওয়া যায় ৩ থেকে ৪ মণ।ওই হলুদ শুকানোর পরে বিক্রি হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মণ দরে।সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হলুদ উত্তোলনের কাজে প্রত্যেক শ্রমিক মজুরি পান ৩০০ টাকা।এতে করে দিনমজুর ও শ্রমিকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষক বাবলু দেওয়ান জানান, তিনি বিগত সময়ে চরের মাটিতে কখনোই হলুদের চাষবাদ করেননি।কিন্তু গত বছর হলুদ আবাদিরা বাম্পার ফলন ও ব্যাপক দাম পাওয়ায় তিনি হলুদ চাষে আগ্রহী হয়েছেন।এবার প্রায় বিঘা দুয়েক উচু জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন তিনি।

উপজেলার বাউসা গ্রামের একটি আম বাগানে হলুদ চাষ করেছেন উদ্যোমী যুবক আব্দুল ওহাব।শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি চাষাবাদও করেন।তিনি বলেন, এ বছর প্রায় তিন বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করেছি।এর মধ্যে এক বিঘা আম বাগানে হলুদ লাগিয়েছি।সাধনা ও শ্রম দিয়ে চাষাবাদ করলে যে কোন আবাদে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব।আব্দুল ওহাব জানান, ১১ হাজার টাকার বীজ কিনে হলুদ রোপণ করেন তিনি।হলুদের গাছ গজানোর সময় দুয়েকবার সেচ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সামান্য রাসায়নিক সার ছাড়া তেমন কিছুই প্রয়োগ করেননি।এতে তার যে পরিমান হলুদ উৎপাদন হয়েছে, তাতে খরচের তুলনায় দশ গুন বেশি টাকা আয় হবে।

আড়ানী পৌর এলাকার বাসিন্দা ও পৌর কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক রাজ, নওটিকার আলাল হোসেন, তেথুলিয়ার সাইফুল ইসলাম, বলিহার গ্রামের আব্দুল জলিল, আমোদপুর গ্রামের আলী আকবর ও শাজাহান আলীসহ আরো অনেকেই জানান, সরকার বাজারে হলুদের ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে দেশে কখনোই হলুদের সঙ্কট পড়বে না।বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে যে পরিমান আমবাগান রয়েছে, এগুলোতে হলুদ চাষ করা হলে দেশের চাহিদা পুরণের পর বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব।আড়ানী এলাকার হলুদ ব্যবসায়ী সিদ্দিক শেখ, শাহাদত হোসেন, রমজান, ফজলু, দিনাজ, হায়দার আলী, ইদ্রিশ আলী ও সাত্তারসহ আরও অনেকেই জানান, বর্তমানে আড়ানী পৌর এলাকার মধ্যে কাঁচা হলুদ কেনা ও সেদ্ধ করে শুকানোর পর বিক্রির জন্য প্রায় শতাধিক চাতাল তৈরি হয়েছে।এ সমস্ত চাতালে ভাল মানের কাঁচা হলুদ ৮’শ থেকে ১২’শ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে। শুকানোর পরে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বাঘা উপজেলার মাটি হলুদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।ধারণা করা হচ্ছে উপজেলায় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ হয়েছে।হলুদ চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিতে উপজেলা কৃষি দপ্তর সদা প্রস্তুত বলে জানান তিনি।

IPCS News/রির্পোট, আবুল কালাম আজাদ।