শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তার গভীর রাতে অফিস

আপডেটঃ ১২:৫২ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ২৩, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

সরকারি দপ্তরে সাধারণত কাজের সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা।কিন্তু পশ্চিম রেলওয়ের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা (এফএ অ্যান্ড সিও) জামশেদ মিনহাজ রহমান দাপ্তরিক কাজকর্ম শুরুই করেন সন্ধ্যার পর, চলে মধ্যরাত এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত।এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।তারা ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে অসদাচরণ, কাজের পরিবেশ নষ্ট করাসহ নানা অভিযোগ করেছেন।গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহীতে পশ্চিম রেলওয়ের সদর দপ্তরে যোগ দেন জামশেদ।ওই দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, তখন থেকে অদ্ভুত নিয়মে চলছে এ দপ্তর।ওই কর্মকর্তা সাধারণত দুপুরের পর অফিসে আসেন।তবে দিনে সামান্যই কাজকর্ম করেন।ধুমধাম করে খাওয়াদাওয়া আর ধূমপান করে ফুর্তিতেই কাটান সারা দিন।সন্ধ্যার পর থেকে ফাইলপত্র দেখা শুরু করেন।সন্ধ্যা হলে ঠিকাদাররা অফিসে আসতে থাকেন।প্রকাশ্যে দরদাম ও দেনদরবার চলে।সমঝোতা শেষ হলে তবেই ফাইল ছাড়েন।কখনো কখনো এসব করতে ভোরও হয়ে যায়।

তারা আরও জানান, অফিসের প্রধান রাত ১২টা-১টা, কখনো ৩টা পর্যন্ত অফিসে অবস্থান করেন।ফলে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এর আগে অফিস ত্যাগ করতে পারেন না।অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের জন্য কাউকে ওভারটাইমও (অতিরিক্ত মজুরি) দেওয়া হয় না।অন্যদিকে গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবার থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন থাকছেন।এতে অনেকের পরিবারে অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।যে বাসভবনে তিনি থাকেন, সেখানকার প্রহরী ও তত্ত্বাবধায়কদেরও তার ফেরার অপেক্ষায় গভীর রাত পর্যন্ত বসে থাকতে হয়।এ নিয়ে কেয়ারটেকারদের সঙ্গে তার কয়েক দফা সমস্যাও তৈরি হয়।পরে ভাড়া বাসার কেয়ারটেকারদের রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য দিয়ে শাসানোর চেষ্টা করেন।এ কারণে গত সেপ্টেম্বরে ভবন মালিক তাকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে নোটিশও দেন।তবে তিনি বাসা ছেড়ে যাননি।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও অভিযোগ করেন, পশ্চিম রেলওয়ের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব কর্মকর্তাকে পাশ কাটিয়ে অধিকাংশ ফাইলপত্র নিজের কাছে নিয়ে নেন জামশেদ মিনহাজ রহমান।তারপর নিজের মতো করে বিল ছাড়করণসহ এককভাবে অন্য সব সিদ্ধান্ত নেন।এ নিয়ে সম্প্রতি অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছে।কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে বা তার কোনো কাজে প্রতিবাদ করলে ওই কর্মচারীকে বদলি করে থাকেন প্রধান হিসাব কর্মকর্তা।এ পর্যন্ত প্রায় ১০ জনকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বা লালমনিরহাট বিভাগে বদলি করেছেন তিনি।সমঝোতার পর কারও কারও বদলি বাতিলও করেছেন।
তারা আরও বলেন, অর্থ উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত অনেকটা গোপনে অস্থায়ী ভিত্তিতে ১৬ কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।

অথচ সরকারি নির্দেশে রেলওয়েতে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, তার সংলগ্ন শৌচাগারে (অ্যাটাস্ট বাথরুম) আলিশান একটি চেয়ার রয়েছে।মাঝেমধ্যেই তিনি ওই চেয়ারে সময় কাটান।কর্মচারীরা তার ডোপ টেস্টের (মাদকাসক্তি পরীক্ষা) অনুরোধ জানিয়েছেন।অভিযোগ পাওয়ার পর খোঁজ নিতে ৪, ১১ ও ১৪ জানুয়ারি দৈনিক সমাচার প্রতিবেদক , রাত ১১টার পর তার দপ্তরে যান।সে সময় তাকে তার কক্ষে দেখা গেছে, দপ্তরে বেশ ভিড়ও ছিল।বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দৈনিক সমাচারের প্রতিবেদক তার কার্যালয়ে অবস্থান করেন।

এ সময় তাকে অস্বাভাবিক দেখা গেছে।এ সময় প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি হাতে সিগারেট নিয়ে পায়চারি করছিলেন।জামশেদ মিনহাজ রহমান ১৮তম বিসিএসের মাধ্যমে হিসাব ক্যাডারে চাকরি পান।খাদ্য মন্ত্রণালয়ে হিসাব কর্মকর্তা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।এরপর সরকারি অনুমতি বা ছুটি না নিয়েই কানাডায় চলে যান পরিবারসহ।ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী শৃঙ্খলা আইনে তার চাকরি চলে যায়।এরপর প্রায় ১০ বছর পর দেশে ফিরে চাকরি ফেরত পেতে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।বহু দেনদরবার ও তদবিরের মাধ্যমে মামলায় রায় পক্ষে নেন।২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে রাজশাহীতে পশ্চিম রেলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা হিসাবে পদায়ন করা হয়।

অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা গোলাম রাব্বানী সমাচারকে বলেন, দপ্তরের সরকারি বিধি অনুযায়ী সব ফাইল ও সিদ্ধান্ত অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব কর্মকর্তার দপ্তর হয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যাওয়ার কথা।কিন্তু প্রধান হিসাব কর্মকর্তা নিচ থেকে নিজের দপ্তরে সব ফাইল তুলে নেন।ফলে দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড আমি কিছুই জানতে পারি না।মৌখিকভাবে এ নিয়ে কয়েক দফা প্রতিবাদ করেছি।কিন্তু ফল হয়নি।গভীর রাত পর্যন্ত দপ্তর চালানো কোনোভাবেই সরকারি নিয়মনীতির মধ্যে পড়ে না।অথচ কর্মচারীদের সকাল ৯টার মধ্যেই অফিসে আসতে হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জামশেদ মিনহাজ রহমান সমাচার প্রতিবেদককে  বলেন, আমার পরবর্তী কর্মকর্তা দপ্তরে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন, এ কারণেই আমাকে গভীর রাত অবধি কাজ করতে হয়।ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছি।তিনি দাবি করেন আদালতের অনুমতি নিয়েই তিনি ১০ বছর কানাডায় অবস্থান করেছেন।এ সংক্রান্ত কাগজপত্র আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, এটা কাউকে দেখাতে বাধ্য নই।

তিনি বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করি না।অফিসে বসে প্রকাশ্যে ধূমপান করা ও মাদক গ্রহণের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়, এ নিয়ে কারও কাছে জবাব দেওয়ার কিছু নেই।জানতে চাইলে পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ বলেন, আলোচিত হিসাব কর্মকর্তার গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করা ও অসদাচরণের বিষয়ে মৌখিকভাবে শুনেছি।রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে জেনেছি।তবে ওই কর্মকর্তা হিসাব ক্যাডারের হওয়ায় তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক দপ্তর।যার কারণে এক্ষেত্রে আমার কিছু করণীয় নেই।সমস্যা প্রকট হলে শুধু কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারি মাত্র, বলে জানান পশ্চিম রেলের এই উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।

IPCS News/রির্পোট, আবুল কালাম আজাদ।