মঙ্গলবার ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রেলের হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসক আর জনবলের তীব্র সঙ্কটে, চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা

আপডেটঃ ৬:০৬ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ১৮, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সব ধরনের জনবল সংকটে ধুঁকছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের হাসপাতালগুলোএই হাসপাতাল গুলোতে রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জাম ও অ্যাম্বুলেন্সসহ সব ধরনের যন্ত্রপাতি,  চিকিৎসক ও জনবল সংকটও রয়েছে।সাম্প্রতি হাসপাতাল গুলোতে প্রেষণে ডাক্তার নিয়োগের বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকদ্বয় রেল ভবনে একাধিকবার চিঠি দিলেও এর উত্তর প্রদানে গড়িমশি রয়েছে রেল সদর দপ্তরের।ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধারাম সর্দার এমন অবস্থায় চলছে এইসব হাতপাতাল গুলো।পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সুজিত কুমার রায় বলেন,পশ্চিমাঞ্চল রেলেওয়র হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট।ইচ্ছা থাকলেও হাসপাতালগুলোতে আগত রেলওয়ে কর্মচারী কর্মকর্তাদের তারা সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছেন না।এছাড়া চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব তো আছেই।এছাড়া তিনি আরও বলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতালগুলো ব্রিটিশ আমলের রুল অনুযায়ী চলে এ হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নয়, রেলের হাসপাতালগুলো হচ্ছে রেলওয়ে কর্মচারীদের সাপোর্টিং স্বাস্থ্যসেবা মাত্র।যার জন্য এই হাসপাতালগুলি সবসময় অবহেলিত থাকে, চিকিৎসক সংকট, জনবল সংকট ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে থাকে সব সময়।

তিনি আরো জানান, রেলওয়ে পশ্চিমের রেল কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য , পশ্চিমাঞ্চলে ৬ টি হাসপাতাল ও ৭ টি ডিস্পেন্সারি আছে।হাসপাতালে গুলি হচ্ছে রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতাল ,পাকশী রেলওয়ে হাসপাতাল, সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতাল, লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতাল,পার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতাল ও সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতাল।ডিস্পেন্সারি গুলি খুলনা, রাজশাহী ,ঈশ্বরদী, বোনারপাড়া, ও সৈয়দপুর, কেলোকা ও তিস্তামোর ঘাটে।

তিনি আরো বলেন,পশ্চিমাঞ্চলে রেলের হাসপাতালগুলোতে মঞ্জুরীকৃত ৮৩৬ টি পদের বিপরীতে বর্তমানে লোকবল আছে ৪৪৪  জন।শূন্য পদ রয়েছে ৩৯২ জন।বিষয় গুলো অকপটে স্বিকার করে পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (সিএমও) ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদ বলেন, বর্তমানে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হলো পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকা।রেল কর্মী রোগীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে কিছু সংখ্যক ডাক্তার নিয়োগ দেওয়ার জন্য গত কয়েক দফা পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের মাধ্যমে রেলওয়ে পরিচালক (সংস্থাপন) বরাবর আমরা চিঠি দিয়েছি।

ডাক্তারদের শূন্য পদ গুলো পূরণ করা গেলে রেল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান নিশ্চিত করা যাবে।পূর্বাঞ্চল রেলের সূত্রে জানা যায়, প্রথম শ্রেণীর ডাক্তারদের মধ্যে মঞ্জুরীকৃত ৩৬ টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ১৬ জন অথচ শূন্য পদ আছে ২০ টি।সিএমও/পূর্ব দপ্তরে ডাক্তারদের মঞ্জুরীকৃত ৩ টি পদের মধ্যে ২ টিই শূন্য।ডিএমও/চট্টগ্রাম দপ্তরে ১৩ টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ৩ জন, শূন্য রয়েছে ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ পদ।যার মধ্যে চট্টগ্রামের চিকিৎসা কর্মকর্তার পদেও কোন ডাক্তার নেই।ডিএমও/পাহাড়তলি দপ্তরে ডাক্তারদের ৪ টি পদের মধ্যে ৩ টিই শূন্য আছে।

চট্টগ্রামের বক্ষব্যাধি  হাসপাতালে এডিএমওর দপ্তরে ডাক্তারদের মঞ্জুরীকৃত ২ টি পদই বর্তমানে শূন্য রয়েছে। ঢাকার ডিএমও দপ্তরের ১৪ টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছে ১১ জন ডাক্তার, ৩ টি পদে ডাক্তারের শূন্যতা রয়েছে।যার মধ্যে একটি ঢাকার বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তার পদও। সংশ্লিষ্টদের দাবী মূলত এই কারনে রোগী শূন্য হয়ে হাসপাতাল গুলো এমন মুখ থুবড়ে পড়েছে।তারা মনে করেন প্রশাসনিক পদে লোক না থাকলেও কাজ চালানো যায় তবে ডাক্তারের শূন্য পদ তো আর প্রশাসনিক কেউ পূরণ করতে পারেনা।এছাড়া পূর্বাঞ্চল রেলের হাসপাতালগুলতে ২য় শ্রেণীর মোট ৪ টি পদে কর্মরত আছে ৩ জন, শূন্য পদ আছে ১ টি।তৃতীয় শ্রেণীর মঞ্জুরীকৃত ১৭৫ টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছে ১০৪ জন, শূন্য পদ রয়েছে ৭১ টি।তাছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর ৮৬৬ টি পদের মধ্যে ১৩১ টি পদ শূন্য রয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, গত এক যুগে রেলের উন্নয়নে ১লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার ১১৮ টি প্রকল্প গ্রহন করেছে বর্তমানে সরকার।এর ফলে আমূল পরিবর্তনের আশ্বাস দেখছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।তবে শীর্ষ কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতায় রেলওয়ের হাসপাতালগুলোর উন্নয়নের কোন উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছেনা।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ডাক্তার নেয়ার আকুতি জানানো হলেও বাস্তবে চিঠি চালাচালিতেই থমকে আছে সিদ্ধান্ত।এছাড়া পূর্বাঞ্চল রেলের অধীনে চারটি হাসপাতালের মধ্যে কোনটিতেই নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার, রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জাম,অ্যাম্বুলেন্স। তাই এখন আর যায় না রোগীও।

হাসপাতালগুলোর প্রতি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাব, আশেপাশে অন্যান্য সরকারী ও বেসরকারি হাসপাতালে উন্নতমানের চিকিৎসা, যথাযত বাজেট বরাদ্দ না পাওয়া –এসব কারনেই পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের হাসপাতাল গুলো কোমায় যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এছাড়া রেলের ডাক্তারদের পড়াশোনা কিংবা উচ্চ শিক্ষার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই এখানে।নিয়োগ বিধি ৮৫ বাতিল হওয়ায় ডাক্তারদের বেতন স্কেলও বাড়ছেনা এখন।দীর্ঘ সময় ধরে এমন অভিযোগ গুলোর ফলে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজমান করছে কর্মরত ডাক্তারদের মাঝে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব)  জাহাঙ্গীর হোসেন  ও পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ  বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল  গুলির সমস্যাগুলির বিষয়েএকই সুরে বলেন, রেলের সকল বিভাগেই জনবল সংকট আছে।সম্প্রতি নতুন নিয়োগ বিধি জারি করা হয়েছে।নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হলে এ সমস্যা গুলো কেটে যাবে বলে মনে মনে করেন এই দুই কর্মকর্তা।হাসপাতাল গুলোতে প্রেষণে ডাক্তার নিয়োগের বিষয়ে উভয় অঞ্চল থেকে রেল ভবনে চিঠি দিয়েছেন।তবে এখনো কোন উত্তর তারা পায়নি।

IPCS News /রির্পোট, আবুল কালাম আজাদ।