শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাজশাহীতে ধরা-ছোয়ার বাইরে মাদক সিন্ডিকেটের গডফাদাররা

আপডেটঃ ৬:১৫ অপরাহ্ণ | মার্চ ৩১, ২০২২

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী : গলায় গামছা, হাতে ধারলো একটি বড় হাসুয়া।সাথে রয়েছে ফেনসিডিলের বোতল।লঙ্গির ভাজেও গুজা রয়েছে আরও দুইটি ফেনসিডিলের বোতল।আরেক হাতে হেরোইনের প্যাকেট।আর মোটর বাইক আরোহী তার কাছ থেকে কিনছেন হেরোইন।এটা ঢাকাই সিনেমা বা হিন্দি সিনেমার কোন দৃশ্য নয়।এই দৃশ্য রাজশাহীতে মাদক কারবারীদের মাদক বিক্রয়ের দৃশ্য।এভাবেই নিজ বাড়ির সামনে মাদক দ্রব্য বিক্রি করছেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুবপুরের সিপাহীপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন (৩৫)।৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার এমন একটি ছবিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।এভাবেই চারঘাটে অপ্রতিরোধ্য মাদক কারবারি ও তাদের গডফাদাররা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাইরাল হওয়া ছবির মাদককারবারি সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে চারঘাট থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।

কিছু দিন আগে সেই মাদক দ্রব্যসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল।জেল থেকে বের হয়ে ফের মাদক কারবার শুরু করেছে সাখাওয়াত।রাজশাহী জেলার সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় বর্তমানে মাদকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।বিশেষ করে ইউসুবপুর ও শলুয়া ইউনিয়ন এলাকায় মাদক কারবার অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।আর এলাকায় চুরি-ছিনতাই ও মারামারি-সংঘাতসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের পেছনের উৎস মাদক।

কিন্তু এই মাদক কান্ডের মূলহোতারা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে।চারঘাটের এই মাদক কারবারের গডফাদারদের অন্যতম সাব্বির হোসেন ও বিপুল নামের তার প্রধান সহযোগি এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে।তারা ইটের ব্যবসার নামে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে।এদের মধ্যে সাব্বিরের বাড়ি চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের গ্রাম শিবপুর গ্রামে।

আর তার সহযোগির বাড়ি পাশের গ্রাম দিঘলকান্দি গ্রামের মোল্লাপাড়ায়।এক সময়ের শিবির ক্যাডার বিপুল বানেশ্বর ইউনিয়ন জামায়াতের নেতার ছেলে।তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক নাশকতার মামলাও রয়েছে।এদের মধ্যে সাব্বির নিজেকে পুলিশের সোর্স এবং তার সহযোগি ওই শিবির ক্যাডার নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে চারঘাট ও পুঠিয়া এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করে।

এছাড়াও গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের তাঁতারপুর গ্রামে মাদক কারবারের প্রতিবাদ করায় খুন হন শাহবাজ আলী নামের এক কৃষক।ওই ঘটনায় সাব্বির ও ওই সাবেক শিবির ক্যাডার জড়িত।ওই ঘটনার তদন্তে তাদের নাম উঠেছে এসেছে বলে চারঘাট থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

জানা গেছে, ওই এলাকা মাদক মুক্ত ঘোষণা করায় স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহাবুর আলীর সঙ্গে স্থানীয় কামাল আলী মাদকের গডফাদারদের দ্বন্দ্ব বাধে।এর জের ধরে খুন হতে হয় সাহাবুরের সহযোগি শাহবাজ আলীকে।জেল থেকে জামিন পেয়েই কামাল বাহিনী গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সাহাবুরসহ তার লোকজনকে হুমকি দেয়।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁতারপুর আক্কাসের মোড়ে জনসমক্ষে সাহাবুরের ভাই কাজলের ওপর হামলা করে হেলমেট পরিহিত প্রায় ২০ জন।তখন সেই মোড়ে চায়ের দোকানে বসে থাকা শাহাবাজ আলী ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।কিন্তু এ ঘটনায় তিন দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার খুনিদের ফাঁসির দাবিতে তাঁতারপুর গ্রামের হাজারও নারী পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল করে এবং বানেশ্বর মোড়ে মানববন্ধন করে।এসময় শাহবাজ হত্যা কান্ডের সাথে জড়িতো মাদক সম্রাটদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানায়।

এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর উপজেলার ঝিকরা এলাকায় মাদক ব্যবসার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে মাদক কারবারি মাইনুল ইসলাম সিলনকে কুপিয়ে হত্যা করে মাদক কারবারি জুয়েল রানা লোকজন।ওই ঘটনায় পুলিশ জুয়েল রানা গ্রুপের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।কিন্তু জুয়েল ও তার গডফাদাররা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে।

এই হত্যা কান্ডেও পুলিশের সোর্স সাব্বির জড়িতো বলে দাবি করেন নিহতর পরিবার।উপজেলা মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, চারঘাট গ্রাম শিবপুর ও পুঠিয়া দিঘলকান্দি গ্রামের দুইজন মাদকের গডফাদার চারঘাটের কিছু এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করে।মাদক কারবারি এসব বাহিনীর কাছে আমরা অসহায়।

তাঁদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের শান্তিতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।কিন্তু ওই সব গডফাদাররা সবসময় থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।চারঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চারঘাট থানা এলাকায় মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান অব্যহত রয়েছে।এছাড়াও মাদক কারবারিদের গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

তাদের ধরতেও অভিযান অব্যাহত আছে।দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।ওসি আও বলেন, ‘আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি।সবগুলো ঘটনা শুধু মাদকসংশ্লিষ্ট এমনটা না।সব খুনের ঘটনাতেই আসামি আটক করা হয়েছে।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।