শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাজশাহীতে অপ-সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কঠোর অবস্থান, অটক-৩

আপডেটঃ ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ০২, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী প্রতিনিধি:- কসাই ,রংমিস্ত্রি ,ডাব বিক্রেতা, কলারবয়, মুচি, ফুটপাতের দোকানী, ছিনতাইকারী, এমন কি মাদক ব্যবসায়ীও হঠাৎ করেই তারা ‘সাংবাদিক’ বনে গেছেন।নামসর্বস্ব অনলাইন আর নিজেদের ফেসবুকের টাইমলাইনে কপি করা লেখা পোস্ট করেই তারা  বড় সাংবাদিক ।বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা আর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজিই এদের প্রধান কাজ।এরা আবার কয়েক মাস পর পর নতুন নতুন প্রেসক্লাব ও তৈরি করেন।চাঁদার উত্তোলিত টাকা নিয়ে মনমনিল্য হলেই  বিভাজনে হয়ে  নিত্যনতুন নাম দিয়ে খুলেন প্রেসক্লাব।এইসব নামধারী সাংবাদিকদের একশ্রেণী দিনের বেলায় এবং অন্য শ্রেনি রাতের বেলায় সাংবাদিকতা করেন।এদের সংবাদ লিখতে হয় না।এদের অনেকেরই কোন অনলাইন পোর্টাল বা পত্রিকা নেই।যাদের আছে তারা আবার লিখতে পারে না ,কারণ তারা “ব”কলম।এটা আবার ঘুরে দামি বাইকে।আবার কেউ কেউ যৌথভাবে চালায় প্রাইভেট কার।লক্ষ চাঁদাবাজি।

৩১ অক্টোবর সকাল ১১ টায়,সদ্য প্রতিষ্ঠিত এমনই বরেন্দ্র প্রেসক্লাব নামের একটি ভুঁইফোড় প্রেসক্লাবের ব্যানারে কয়েকজন কথিত সাংবাদিক মানববন্ধন করতে যান নগরীর  শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে।সম্প্রতি কয়েকজন কথিত সাংবাদিক এই প্রেসক্লাব গঠনের ঘোষণা দেন।এরা রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সচিব ও আঞ্চলিক শিক্ষা ভবনের পরিচালক এবং সহকারী পরিচালকের অপসারণের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

এসব কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি চাঁদা চাইতে এসেছিলেন।তা না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করা হচ্ছে।মানববন্ধন করা কোন সাংবাদিকদের কাজ নয় জানিয়ে তারা রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকদের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।কারা মানববন্ধন করছেন তা দেখতে ঘটনাস্থলে যান রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন সাংবাদিক।

রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকতার নামে এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আয়োজকদের বলেন।আর তখনই পুলিশের সামনেই রফিকুল ইসলামের ওপর চড়াও হন কথিত সাংবাদিকরা।তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে সিনিয়র ফটোসাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীর, স্থানীয় সাংবাদিক রাজু আহমেদ এবং কাবিল হোসেনকেও লাঞ্ছিত করা হয়।সাংবাদিক রাজু, কাবিল হোসেন ও আজমকে মারধোর করে ওই হামলাকারীরা।

এরপর রাজশাহীতে কর্মরত মূল ধারার সাংবাদিকরা প্রশাসনকে তাদের গ্রেফতার করার জন্য বলেন।কিন্তু প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করলে, রাস্তায় বসে পড়েন সাংবাদিকেরা। অবরোধ করেন নগরীর ব্যস্ততম শহীদ কামরুজ্জামান চত্বর।দীর্ঘ  ৫ ঘন্টা পর সাংবাদিকদের দাবি মেনে নিলে বিকেল পাঁচটায় অবরোধ তুলে নিন সাংবাদিকরা।

মূল ধারার সাংবাদিকদের দাবি ছিল কথিত সাংবাদিকদের সহযোগিতা করার জন্য বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নিবারণ চন্দ্র বর্মণকে অবিলম্বে প্রত্যাহার ও চাঁদাবাজ সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের দাবি।অবশেষে  দুপুরের দিকে পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সঙ্গে বসার অনুরোধ জানান।

তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদরুল হাসান লিটন, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান জনিসহ সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

পুলিশ কমিশনার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাৎক্ষণিক কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় সাংবাদিকরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।এদিকে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের কাছে গেলেও অন্য সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করেই ছিলেন।প্রতিনিধিদল ফিরে আসার পরও ওই আন্দোলন চলছিল।

বিকাল পৌনে ৫টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, হামলাকারী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবংপুলিশ কমিশনার বোয়ালিয়ার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মনকে প্রত্যাহার করতে তিন দিন সময় চেয়েছেন নিশ্চিত হয়ে অবরোধ তুলে নিন সাংবাদিকেরা।আটক কথিত তিন সাংবাদিক হচ্ছেন ফারুক আহমেদ, রেজাউল করিম ও লিয়াকত হোসেন।

তবে সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন এই সময়ের মধ্যে ওসি প্রত্যাহার না হলে বুধবার দুপুর ১২টায় বোয়ালিয়া থানা ঘেরাও করা হবে।ওই দিন রাতেই ১১ জন নমিও আসামিসহ অজ্ঞাত  ২৫ জনকে আসামী করে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।